ঈদ সামনে রেখে প্রতিবছর বেড়ে যায় মৌসুমি অপরাধীদের তৎপরতা। শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও প্রতারণার ফাঁদ পাতে এসব চক্র। ঈদ ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী সক্রিয় হয়েছে অপরাধী চক্র। ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, চাঁদাবাজচক্রসহ নানা ধরনের অপরাধীরা বিভিন্ন স্থানে আটক হচ্ছে। অনন্যবারের মতো এবারো তৎপর রয়েছে একাধিক চক্র; এমন তথ্যে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বড় অঙ্কের অর্থবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানি এস্কর্ট সেবা দিচ্ছে পুলিশ। তবে এবার নতুন চিন্তা ডেভিলস বার্থ(শয়তানের নিশ্বাস) নামক মাদক। এটি ব্যবহার করে অপরাধীরা ভিকটিমকে নিঃস্ব করছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে অপরাধী চক্রের তৎপরতা বাড়তে দেখা যায়। নানা কৌশলে মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা। এসব চক্রের মধ্যে রয়েছে অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, থাবা-পার্টি, এবং টানা-পার্টি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে এসব অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমেছে। ঈদের কেনাকাটায় শুরু হওয়ায় ছিনতাইসহ মৌসুমি অপরাধী ধরতে এরইমধ্যে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ, ডিবির একাধিক টিম। সে সঙ্গে কাজ করছে পিবিআই ও র্যাব। এসব অপরাধী ধরতে গোয়েন্দা বেশে নগরীর ব্যস্ত জায়গা ও শপিংমলগুলোর পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ডিবির একাধিক টিমের সদস্য। পবিত্র ঈদ সামনে রেখে এসব সংঘবদ্ধ অপরাধী রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় আসা লোকজনকে টার্গেট করে সখ্য স্থাপন করে। পরে তাদের অপর সহযোগিরা টার্গেটকৃত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো পানীয় বা খাদ্যদ্রব্য খেতে আমন্ত্রণ জানায়। টার্গেট করা ব্যক্তি রাজি হলে তাকে চেতনা নাশক মেশানো ওই খাবার খাওয়ায় ও নিজেরা সাধারণ খাবার খায়। এসব পানীয় বা খাবার খেয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তি অজ্ঞান হলে, তারা তার মূল্যবান জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা ও মোবাইলফোন নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, ক্রিম জাতীয় বিস্কুটসহ বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে। আবার কখনও কখনও অজ্ঞান ব্যক্তির মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তার স্বজনদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ ও অন্যান্য মাধ্যমে মুক্তিপণও আদায় করে। ধারণা করা হচ্ছে এরইমধ্যে বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রতারকদের তৈরি কোটি টাকার জাল নোট। জাল টাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো সারাবছর তৎপর থাকলেও উৎসবে বড় টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকায় এবারের ঈদে মিলতে পারে স্বস্তি। চলমান রমজান ও ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ দমনে জোরালো কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ অন্যান্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে নজরদারি বাড়াতে হবে। ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার পুলিশ সদরদপ্তরের হল অব প্রাইডে অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্বকালে এ নির্দেশনা দেন তিনি। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখ মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আইজিপি। তিনি ফিটনেসবিহীন বাস/লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধকল্পে নিয়মিতভাবে গানচেকিং করতে হবে। তিনি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আরও বেশি তৎপর হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন। আইজিপি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে। জনগণ জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯-এ কল করে প্রতিনিয়ত পুলিশের সেবা পাচ্ছেন। তিনি জনগণকে আরও উন্নত সেবা প্রদানের জন্য সচেষ্ট থাকতে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।