দেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনার খরচ অভিভাবকদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন। অভিভাবক নির্ভর এসব শিক্ষার্থীরা স্নাতক-স্নাতকোত্তর করতে ২৭ বছর শেষ হয়ে যায়। সীমাহীন কষ্ট নিয়ে পড়াশোনা করা একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে নিজের একটা পরিচয় গড়ার, ভালো একটি কর্মসংস্থানের। তার দিকে চেয়ে থাকে সমাজ, পরিবার কিংবা প্রিয়তম কেউ। পড়াশোনা শেষে একজন শিক্ষার্থী চাকরিতে ঢুকবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দিন, মাস, বছর শেষ হয়ে যায়, চাকরি যুদ্ধে লড়তে যেয়ে অনেকেই বয়স শেষ করে ফেলেন। কপালে আর কাঙ্খিত চাকরি জোটে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। যা আগের তুলনায় কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’-এ চিত্র উঠে এসেছে। আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিবিএস। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ি বর্তমানে দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর হার কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে, যা আগে ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে বেকার পুরুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯০ হাজার আর বেকার নারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৪০ হাজার। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে সাত কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ চার কোটি ৭৪ লাখ, নারী দুই কোটি ৫৯ লাখ। গত পাঁচ বছরে ৯৯ লাখ ১০ হাজার শ্রমিক বেড়েছে। জরিপে বলা হচ্ছে, শ্রমশক্তির বাইরে মোট জনশক্তির পরিমাণ চার কোটি ৬৯ লাখ। ২০১৬ সালের তুলনায় এই সংখ্যা ১৪ লাখ বেড়েছে। দেশে গড় বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ পুরুষ ৩ দশমিক ৫৬ এবং নারী ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তাছাড়া, দেশে এখন সাত কোটি সাত লাখ কর্মক্ষম ব্যক্তি রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি তিন কোটি ২২ লাখ। এ বিশাল বেকার জনগোষ্ঠী সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগও পান না। বেকারত্বের এ হিসেব আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দেওয়া মানদণ্ড অনুযায়ী। আইএলও মনে করে, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ না করলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে ধরা হয়। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি যে হারে হচ্ছে, সে হারে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। জাতীয় কর্মসংস্থান নীতির তথ্যানুসারে, দেশের প্রায় ৭৮ শতাংশ তরুণ নিজেদের কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে এ উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দাবি করেন, যেসব মা বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করেন, তারাও বেকার নন। কেউ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলে তিনি আর বেকার নন মনে করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের সময় কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যের হার কমেছে। সরকার বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে কর্মসংস্থান বেড়েছে। করোনার সময় ২০ শতাংশ থেকে দারিদ্র্য কমে ১৬ শতাংশ হয়েছে। সরকার বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। আপনারা গভীরে গেলেই বুঝবেন দেশে দারিদ্র্য কমেছে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার সময় কর্মসংস্থান কমেনি বরং বেড়েছে। শহর ছেড়ে অনেকে গ্রামে গিয়ে মাছ, সবজি চাষ করেছেন। অনেকে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছেন। লেবার (শ্রমিক) সেভাবে কমেনি। এসময় নারীর কর্মসংস্থানও বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস ২০২১ বইয়ের (জুন ২০২২ সালে প্রকাশিত) তথ্য অনুযায়ী সরকারের অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সরকারি কার্যালয়গুলোতে বেসামরিক জনবলের মোট শূন্য পদ ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি। এর মধ্যে ১ম শ্রেণীর পদ ৪৩ হাজার ৩৩৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৪০ হাজার ৫৬১, তৃতীয় শ্রেণীর ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৮ এবং চতুর্থ শ্রেণীর শূন্য পদ ১ লাখ ২২ হাজার ৬৮০টি। ৪০তম বিসিএসে ১ হাজার ৯২৯ জন নিয়োগ করা হয়েছে। ৪২তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে ৩ হাজার ৯৬৬টি সহকারী সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলমান। ৪৩তম বিএসএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন চলছে, ৪৪তম লিখিত পরীক্ষা গত ১১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। আগামী মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি টেস্টের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত আছে। সরকারি অফিসগুলোতে শূন্য পদে নিয়োগ চলমান আছে বলে জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী জানান, দ্বিতীয় শ্রেণীর ১০-১৩তম পদের নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে হয়ে থাকে। ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডের নিয়োগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, সংস্থার নিয়োগবিধি অনুযায়ী হয়। তিনি জানান, আদালতে মামলা থাকায় নিয়োগবিধি প্রণয়ন কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় এবং পদোন্নতির জন্য যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় কিছু শূন্য পদ পূরণ করা যায় না। ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস ২০২১’ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। তাদের মধ্যে নারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ জন, যা মোট চাকরিজীবীর প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০১০ সালে নারী চাকরিজীবীর সংখ্যা ছিল ২১ শতাংশ।