মানবদেহের জন্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল কলা। ফলটি বছরজুড়ে হাতের নাগালে পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এই ফলটির দামও থাকে তুলনামূলক অনেকটাই কম। সবারই কাছে কলা ফলটি খুবই প্রিয় হওয়ায় কম বেশি সবাই কিনে থাকেন।
ইফতার এবং সেহরিতে কলা অন্যতম হওয়ায় রমজানের শুরুতেই সর্বত্র হাট বাজারে কলার চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে দামও। রমজানের আগে যেখানে প্রতি হালি ২০-৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে আজ সেখানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
রমজানের শুরুতেই এতো বেশি দাম বাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের নাগালের বাইরে চলে গেছে এ প্রিয় ফলটি।
বিক্রেতারা জানায়, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সব ধরনের কলা হালি প্রতি ৫-৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম কমে আসবে।
রংপুর অঞ্চলে পর্যাপ্ত কলার আমদানি হচ্ছে এমনটি জানা গেলেও কলার দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ প্রায়। এখন ছোট কলার দাম ৮ টাকার নিচে নেই । এদিকে কলার দাম এত বৃদ্ধি পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। আর বিশেষ করে বেশ বেকায়দায় পড়েছে নিন্ম আয়ের মানুষেরা।
সরেজমিনে দেখা যায় রংপুর অঞ্চলের জেলা গুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য কলার ট্রাক আসছে মোকামতলা, ফাসিতলা থেকে। তারপর ও ব্যবসায়িদের দাবি কলার সরবরাহ কম।
এ বিষয়ে কলার ব্যাপারী মুহসিন আলী বলেন, আমি ফাসিতলা থেকে কলা আনি। আমার কাছ থেকে পাইকারী ব্যাবসায়িরা কলা নিয়ে যায়। এ বছর রমজানে কলা চাষিরা আগের তুলনায় একটু বেশি দাম দাবি করছে। এছাড়া তেলের দামের কারণে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে এরও একটি প্রভাব আছে।
রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাজার, পাড়া মহল্লায় চায়ের দোকানের থেকে শুরু করে ভ্রাম্যমান ভ্যানগাড়ীতে করে অলিতে গলিতে কলা বিক্রি করছেন হকার। তবে দাম কম নেই।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার দোকানী মেনা মামুদ বলেন, মোকামে গিয়েছিলাম কলা ক্রয় করতে মোকামে দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গেল দুদিন যাবৎ মোকামেও কলা সরবরাহ অনেক কম।
ক্রেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোজায় ইফতারী বা সেহরীতে কলা ছাড়া খেতে ভাল লাগেনা। বিশেষ করে সেহরী সময়ে কলা খেলে সারাদিন পেটে ভিতর ঠান্ডা অনুভব হয়। যে কারণে রোজায় কলার চাহিদা ব্যাপক তবে এবছর যেন আগের তুলনায় কলার দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাজারে এসছিলাম একটু কাঁচা দেখে কলা ক্রয় করতে এসে দেখি মাঝারী আকৃতির কলা দাম ১২০ টাকা ডজন বলছে দোকানী, মানে একটি কলার দাম ১০ টাকা। প্রতি বছর রোজায় সব কিছুর দাম বাড়ে কলার বাজারও সিন্ডিকেট করেছে ব্যাবসায়িরা। এক্ষেত্রে আমরা ছোট ক্রেতারা কি বলতে পারি। এখন চাহিদা ছিল দশটি কলা এখন অতিরিক্ত দামের কারণে ৬টি কলা ক্রয় করছি। এর থেকে আর কি করতে পারবো নিজেদের খরচ কমিয়ে আনতে হবে। আর মনে মনে ধিক্কার দিতে হবে অসাধু মজুদদার ব্যবসায়িদের। যারা রমজান মাসকে ঘিরে গরীব নিন্ম আয়ের রোজাদার মানুষদের কষ্ট দিচ্ছে।
জলঢাকা পৌর শহরের বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ফুটপাতে বসে কলা বিক্রি করছেন ব্যবসায়িরা। পাশাপাশি বাজারের আড়ৎ এবং খুচরা দোকানগুলোতেও কলা বিক্রি হচ্ছে। রমজানের আগে যেখানে কলা বিক্রি হয়েছে প্রতি হালি ২০ থেকে ২৪ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৬ টাকা।
স্থানীয় বাজারে চম্পা, মালভোগ কলা বেশি বিক্রি হচ্ছে। মান বেধে সব কলার দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানকে কেন্দ্র করে দাম এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর ফলে তাদের বিপাকে পড়তে হয় ।
সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।
এ অবস্থা বরদাশত করা হবে না। ছোট বড়-করপোরেট যেই প্রতিষ্ঠানই অবৈধ মজুদ করুক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজার কঠোর মনিটরিং করা হবে বলেও জানান তিনি।