রাজাকারের তালিকা করতে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। সেই নীতিমালার আলোকে আগামী বছরের (২০২৪ সালের) মার্চের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা ব্যক্তিদের সাধারণভাবে রাজাকার বলা হয়। পাকিস্তানিদের সহযোগী আরও দুটি সংস্থার নাম ছিল আলবদর ও আলশামস। পাকিস্তানিদের নানা অপকর্ম যেমন- হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন তারা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর এত বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের তালিকা করা হয়নি। রাজাকারের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজাকারের তালিকা করার জন্য একটি নীতিমালা করা হয়েছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী রাজাকারের তালিকা করা হবে। আমরা আশা করছি ২০২৪ সালের ২৬ মার্চের মধ্যে তালিকাটি চূড়ান্ত করতে পারবো। তবে এটি নিয়ে মূলত কাজ করছে শাজাহান খানের নেতৃত্বে সংসদীয় উপ-কমিটি।’ ২০১৯ সালে ১৫ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে ঘোষিত তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর ও ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুসহ রাজশাহীর আরও দুই ব্যক্তির নাম ছিল ওই তালিকায়, যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে। এ নিয়ে সারাদেশে সমালোচনা শুরু হয়। বিতর্কের মুখে রাজাকারের তালিকা স্থগিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওয়েবসাইট থেকে তালিকাটি সরিয়ে ফেলা হয়। পরবর্তী সময়ে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এদিকে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চলে আসায় তখন দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘এ তালিকা আমরা প্রণয়ন করিনি, প্রকাশ করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা যা পেয়েছি তাই হুবহু প্রকাশ করেছি।’ পরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীদের তালিকা করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনুমোদন, জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর গত ৭ সেপ্টেম্বর নতুন ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২’ জারি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, রাজাকারের তালিকা করতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় উপ-কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় তারা মিটিংয়েই বসতে পারছিলেন না। শেষে চলতি বছরের এপ্রিলে নতুন সংসদীয় সাব-কমিটি গঠন করা হয়। আগের মতো নতুন সাব কমিটিতেও শাজাহান খান আহ্বায়ক হন। এর অন্য দুই সদস্য হলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও আওয়ামী লীগের ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে উপ-কমিটির আহ্বায়ক শাজাহান খান জানান, উপজেলা থেকে রাজাকারের তালিকা নেওয়া হচ্ছে। অনেক উপজেলা থেকে তালিকা পেয়েছি। যাচাই-বাছাই করে রাজাকারের তালিকা একবারে প্রকাশ করা হবে। এটি জটিল কাজ। দেখেশুনে, যাচাই-বছাই করে কাজটি করা হচ্ছে। তাই বিলম্ব হচ্ছে।