জাপানকে ভূমিকম্প সহনীয় দেশ উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, জাপানে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৭০-৮০তলার ভবনগুলো দোলে কিন্তু ধসে পড়ে না। কিন্তু বাংলাদেশে লাখ লাখ ভবন থাকলেও শত শত প্রকৌশলী নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, প্রত্যেক বাড়িতে প্রকৌশলীদের পাঠানো সম্ভব নয়। ভবন মালিকরাই প্রকৌশলীদের আমন্ত্রণ করবেন, তোমরা আসো, আমার ভবনটি পরীক্ষা করো। ভূমিকম্প সহনীয় করার জন্য যা করা প্রয়োজন তাই করো। ভবন মালিক ও সরকারকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারবো। দেশকে ভূমিকম্প সহনীয় করার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের মেঘালয় থেকে ৮.৬ মাত্রায় ভূমিকম্প হতে পারে। ১৮৯৭ সালের সর্বশেষ ভূমিকম্প হয়েছিল। প্রায় ১২৭ বছর আগে ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ফল্টের পরবর্তী কম্পন আসতে পারে ২০০ বছর, ৩০০ বছর অথবা ৫০০ বছর পরে। যদি আমরা ২০০ বছর ধরি, তাহলে আমাদের হাতে সময় আছে। দেশটাকে ভূমিকম্প সহনীয় করার। ভূমিকম্প দেখার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ নেপালে ভূমিকম্প দেখেছি। এরপরে হাইতি, আর্জেন্টিনা, সিরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প দেখেছি। সব জায়গায় কিন্তু হতাহত হয়েছে। আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে জাপান। ২০১৯ সালে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন আন্তর্জাতিক সেমিনারে ভূমিকম্প নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে জাপানের জাইকার পক্ষ থেকে ভিডিও দেখানো হয়, সে ভিডিওতে দেখা গেল ১০ মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। ৭০-৮০ তলা ভবন সেগুলো দুলছে কিন্তু কোনো ভবন ধসে পড়েনি। এতে তারা আমাদের বুঝিয়েছে জাপান একটি ভূমিকম্প সহনীয় দেশ। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ভূমিকম্পের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে-ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি ভবন, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা; অতিমাত্রায় ঝুঁকিতে থাকা ভবন চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার এবং রেট্রোফিটিং-এর ব্যবস্থা করা; প্রয়োজন হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা। বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি রোড ম্যাপ তৈরি করা। ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীলতা নির্দেশিকা তৈরি ও মানতে বাধ্য করা। উপ-পরীক্ষার জন্য রিসার্স, ট্রেনিং ও টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন নিশ্চিত করা। প্রতি তিন মাস পরপর ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয় ও প্রস্তুতি পর্যলোচনা করা। ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিরসন নিয়ে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বির্তাকিকরা অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ট্রফি ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মহম্মদ রইস, ড. দিলারা জাহিদ, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক মো. হাবিবুর রহমান রাহী।