তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা ভাষার বিকৃতি ঘটায়, সংস্কৃতিকে বদলে দিতে চায়, সেই অপশক্তি এবং সেই অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতি আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘জাতীয় সাহিত্য উৎসব-২০২৩’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আয়োজক সংগঠনের সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। ফিতা কেটে উৎসব উদ্বোধনের পর এ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকাটি প্রধান অতিথির হাতে তুলে দেন আয়োজকরা। ড. হাছান বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, যারা আরবি হরফে বাংলা লেখা প্রচলন করে ভাষার তথাকথিত ইসলামীকরণের চেষ্টা করেছিল, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গান পূর্ব-বাঙলায় নিষিদ্ধ করেছিল, হিংস্র থাবা দিয়ে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেড়ে নিতে, বদলে দিতে চেয়েছিল, স্বাধীনতার ৫২তম বছরেও যারা বাঙালি না বাংলাদেশি সেটি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকে, তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির ছায়াতলে থেকে এসব গোষ্ঠি ক্ষণে ক্ষণে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে, বাংলা ভাষার নানা বিষয় নিয়ে অবান্তর অহেতুক প্রশ্ন তুলে দেশের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়। এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ বাংলা বিশ্বময় একটি গর্বিত ভাষা উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বময় পালিত হয়। সমগ্র পৃথিবীতে ৩৫ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে এবং সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীতে ষষ্ঠ ভাষা। আমাদের লক্ষ্য জাতিসংঘে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করা। সেই লক্ষ্য, সেই স্বপ্ন নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনুষ্ঠানে আগত সাহিত্যিকদের স্বাগত জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ভৌগোলিক পার্থক্য আমাদের দু’দেশের বাঙালিদের আত্মার বন্ধনকে পৃথক করতে পারেনি। আমরা একই পাখির কলতান শুনি, একই নদীর জলধারায় সিক্ত হই, একই ভাষায় কথা বলি। মহান ২১ ফেব্রুয়ারির প্রতি ভারতের বাঙালিদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা দেখে আমি অভিভূত। ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কলকাতাতেও নানা অনুষ্ঠানমালা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বাঙালিরা অনেক জাতিগোষ্ঠির তুলনায় অনেক মেধাবী। ইউরোপের বাইরে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গাছের যে প্রাণ আছে, এটি প্রথম আবিষ্কার করেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি বাঙালি ড. এফ আর খান। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে যতজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছে তার একটি বড় অংশ বাঙালি। অর্থাৎ বাঙালিরা মেধার স্বাক্ষর যুগে যুগে রেখেছে, এই ধারা অব্যাহত থাকুক এটিই আমাদের কামনা।’ অনুষ্ঠানের সভাপতি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আমার নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জের সমিতি বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সাহিত্য উৎসব আয়োজন করতে পেরেছে এজন্য আমি গর্বিত। দু’দেশের সাহিত্যিকদের নিয়ে সূচিত এই উৎসব প্রতি বছর আমরা করতে চাই।’ নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কেএমএ হানিফ হৃদয়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আহম্মদ মীর আকরাম, শাকিরা নোভা, ভারতের নন্দিনী লাহা, শ্যামল মজুমদার প্রমুখ আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এসময় বক্তব্য রাখেন কবি আসলাম সানী ও ভারতীয় সাহিত্যিক দিলীপ রায়। দুই দিনব্যাপী উৎসবে দু’দেশের সহস্রাধিক কবি ও আবৃত্তিকার অংশ নিচ্ছেন।