নার্সিং ও মিডওয়াইফ শিক্ষায় ডিপ্লোমা ও স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদানের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ বিল পাস করেছে সংসদ।
একইসঙ্গে সংশোধিত আইনে ‘নার্সিং কাউন্সিল’কে ‘নার্সিং ও মিডওয়াইফ কাউন্সিল’ এবং ‘সেবা পরিদপ্তরের পরিবর্তে ‘নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর’ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবর্তে ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর’ করা হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধন ব্যতীত নার্সিং কোর্স পরিচালনা ও অনুমোদিত সনদ ছাড়া কেউ নিজেকে নার্স, মিডওয়াইফ পেশাজীবীর ভুয়া পরিচয় প্রদানের দায়ে অর্থ ও কারদণ্ডের বিধান বহাল রাখা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সোমবারের বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সুপারিশকৃত আকারে বিলটি পাস করা হয়। বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।
২০১৬ সালে প্রণীত বিদ্যমান আইনের ১৬ নং ধারা সংশোধন করে ‘ডিপ্লোমা বা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর’ শব্দ প্রতিস্থাপন করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদানের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আইনের ৩০ নং ধারা সংশোধন করে নতুন ‘৩০ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অপরাধগুলো অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতে কর্তৃক বিচার্য হবে।’ নতুন ৩১ ধারা সংযোজন করে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, আইনের ২১, ২৭ ও ২৮-এর অধীন কারদণ্ড প্রধানের এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতের সংশ্লিষ্ট ধারায় অর্থদণ্ড আরোপের ক্ষমতা থাকবে। ২১-এ নিবন্ধন ব্যতীত নার্সিং বা, মিডওয়াইফারি বা, সহযোগী পেশা গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২৭ ধারায় ভুয়া পদবী, ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২৮ ধারায় প্রতারণামূলক প্রতিনিধিত্ব বা নিবন্ধনের দণ্ড বর্ণিত হয়েছে।
নতুন ৩১ (ক) প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, আপতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে বা এই আইনের অন্য কোনো বিধান যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধ মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্ত মোবাইল কোর্টে কর্তৃক বিচার্য হবে। আইনে কাউন্সিলের অনুমোদন ব্যতীত নিজেকে নার্স, মিডওয়াইফ বা সহযোগী কোনো পেশাজীবী হিসেবে পরিচয় প্রদান করলে অনধিক এক বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। এ অপরাধ অব্যাহত থাকলে, প্রতিবার পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যূন ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত হিসাবে দণ্ডনীয় হবেন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃবিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, ২০১৬ বলবৎ হওয়ার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ’ ও ‘স্বাস্থ শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ’ নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনে ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়’- এর স্থলে ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ’ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এছাড়া “বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল” এর পরিবর্তে “বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল”, “সেবা পরিদপ্তর” এর পরিবর্তে “নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর”, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর” এর পরিবর্তে “স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর” সহ কয়েকটি পদনাম পরিবর্তন হওয়ায় আইনটি পরিমার্জনপূর্বক সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সংশোধিত আইনটি প্রণীত হলে নার্সিং শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, নার্সিং শিক্ষার প্রসার মানসম্মত নার্স তৈরি, সেবার মান এবং সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটবে।