বাংলাদেশে-জিম্বাবুয়ে টি-২০ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিকদের হারিয়ে স্বস্তির জয় তুলে নিয়েছে সোহানবাহিনী। জিম্বাবুয়েকে তারা ৭ উইকেটে পরাজিত করেছে। এর ফলে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ।
শুরুতে মোসাদ্দেকের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তা সত্ত্বেও ১ম ম্যাচের মতো ২য় ম্যাচেও সিকান্দার রাজার ৫৩ বলে ৬২ রানের ইনিংস অনেকটা স্বস্তি বয়ে আনে স্বাগতিক শিবিরে। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সোহান বাহিনীকে ১৩৬ রানের লক্ষ্য দেয় স্বাগতিক শিবির।
জয়ের জন্য ১৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৭ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দলের হয়ে ওপেন করতে নামেন লিটন দাস ও মুনিম শাহরিয়ার । কিন্তু ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার আজও নিজেকে তেমনভাবে মেলে ধেরতে পারেননি। মাত্র ৭ রান করে রিচার্ড নাগারাভার বলে সরাসরি বোল্ড আউট হয়ে সাজ ঘরে ফেরেন।
এদিকে ১ম ম্যাচের মতো দেখেশুনে খেলে টাইগার শিবির। মুনিম আউট হলে লিটন দাস ও এনামুল হক বিজয় দলের হাল ধরেন। লিটন ৩৩ বলে ৫৬ রান করে শেন উইলিয়মসের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন।
সবাই মনে করছিল বিজয় আজ দলের হয়ে রান করবেন। কিন্তু বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি এনামুল হক বিজয়ও। সিকানদার রাজার ঘুর্ণিতে ১৫ বলে ১৬ করা বিজয় মাসাকাদজার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজ ঘরে ফেরেন।
লিটনের ঝড়ো ফিফটি আর বিজয়ের আউটের পর হাল ধরেন আফিফ হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তাদের শান্ত স্বভাবের ক্যামিও ইনিংস দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। যদিও কাজের কাজটি করে গেছে অভিজ্ঞ লিটন দাস। তার ফিফটিই দলের জয়কে অনেক সহজ করে দেয়। আফিফ ২৮ বলে ৩০* ও শান্ত ২১ বলে ১৯* রান করে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত পরাজিত থাকেন।
এর আগে ইনিংসের শুরুতে টস হেরে ফিল্ডিয়ে নামে টাইগাররা। মাঠে নেমেই অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান মোসাদ্দেকের হাতে তুলে দেন সাদা বল।
তারপরই শুরু হয় মোসাদ্দেক ম্যাজিক। তার একের পর এক ঘুর্ণিতে জিম্বাবুয়ে শিবিরে কাঁপন ধরে যায়। প্রথম ওভারেই ২ উইকেট ও পরের ওভারে আরেকটি উইকেট তুলে অনেকটা ব্যাকফুটে ঠেলে দেন তাদেরকে। ৫ উইকেট তুলে নিয়ে হন ক্যারিয়ার সেরা।
শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে ইনিংস থামে ১৩৫ রানে। টাইগারদের সামনে টার্গেট গিয়ে দাঁড়ায় ১৩৬।
খেলার শুরুতে প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত মোসাদ্দেকের। নিজের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে নেন আরো ১টি করে উইকেট। এতে প্রথমবারের মতো টি-২০তে ফাইফারের স্বাদ পেলেন তিনি। নিজের কোটার ৪ ওভারের স্পেলে ২০ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট।
এ ম্যাচেও টস হেরে ফিল্ডিয়ে নামে টাইগাররা। মাঠে নেমেই অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান মোসাদ্দেকের হাতে তুলে দিলেন সাদা বল। আর তাতেই দিনটি অনেকটা নিজের করে নেন মোসাদ্দেক।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংই নয় শুধু- ইলিয়াস সানি, মোস্তাফিজুর রহমান এবং সাকিব আল হাসানের পর চতুর্থ বোলার হিসেবে টি-২০তে এক ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারী বোলার হয়ে গেলেন মোসাদ্দেক। এর আগে তার সেরা বোলিং ছিল ২১ রানে ২ উইকেট।
১৯ টি-২০ ম্যাচে নিয়েছিলেন মোটে ৭ উইকেট। সেখানে আজ এক ম্যাচেই ২০ রান দিয়ে নিলেন ৫ উইকেট। ৪ ওভারের কোটা শেষ করার পর মোসাদ্দেকের নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ৪-০-২০-৫।
সবাইকে ছাপিয়ে আজ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মোসাদ্দেক। আগের ম্যাচে আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ২০৫ রান তোলার দলটি আজ থামল ১৩৫ রানে। যদিও আগের ম্যাচের নায়ক সিকান্দার রাজা এদিনও ফিফটি তুলে নেন। তার দায়িত্বশীল ব্যাটেই বাংলাদেশেকে ১৩৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছে।
জিম্বাবুয়ের ইনিংসে প্রথম আঘাত প্রথম ওভারেই আনেন মোসাদ্দেক। আউটসাইড অফের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রাগিস চাকাভা। শূন্য রানে আউট হন এই ওপেনার। ওভারের শেষ বলে আবার আক্রমণ। এবার আউটসাইড অফের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে মেহেদীর হাতে ক্যাচ দেন মাধেভেরে। আগের ম্যাচে তিনি ভুগিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। এবার ফিরলেন মাত্র ৪ রানে।
মোসাদ্দেকের ঘূর্ণিতে দিশেহারা জিম্বাবুয়ে তৃতীয় উইকেট হারায় ইনিংসের তৃতীয় ওভারে, এবার শিকার ক্রেইগ আরভিন। এই অফ স্পিনারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক, বল যায় প্রথম স্লিপে লিটনের হাতে। ৪ বলে ১ রান করে ফেরেন আরভিন। পরের দুই উইকেটও মোসাদ্দেকের দখলে।
নিজের তৃতীয় ওভারে উইলিয়ামসের ফিরতি ক্যাচ নেন মোসাদ্দেক। ৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। নিজের কোটার চতুর্থ ওভারে আউট করেন মিল্টনকে। অফ স্টাম্পের বল ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে সুইপ করতে গিয়ে হাসানের হাতে ধরা পড়েন এই ব্যাটসম্যান। ৮ বলে ৩ রান করেন মিল্টন। ৭ ওভারে ৩২ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে জিম্বাবুয়ে।
মোসাদ্দেকের স্পেল শেষ হলেই আবার খেলায় ফেরে স্বাগতিকরা। দলকে টেনে তোলেন রাজা আর রায়ান বার্ল। মুস্তাফিজ, শরিফুল, হাসানদের শাসন করে খেলে টানা দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন রাজা। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে বার্ল করেন ৩১ বলে ৩২ রান। তাকে হাসান ফেরালে ভাঙে ৬৫ বলে ৮০ রানের পার্টনারশিপ। বার্ল আউটের পর ফেরেন রাজাও। তাকে শিকার বানান মুস্তাফিজ। ৫৩ বলে ৬২ রানের ইনিংসটি রাজা সাজান ৪টি চার ও ২টি ছয়ের মারে।
শেষদিকে ওয়েলিংটন মাসাকাদজার ৬ এবং লুক জংউইয়ের ৫ বলে ১১ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রানের পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে।
স্কোর:
জিম্বাবুয়ে – ১৩৫/৮ ২০ ওভার
সেকান্দার রাজা – ৬২
রায়ন বার্ল – ৩২
বোলিং:
মোসাদ্দেক হোসেন – ৫ উইকেট
বাংলাদেশ – ১৩৬/৩ ১৮ ওভার
লিটন দাস – ৫৬
আফিফ – ৩০*
বোলিং:
রাজা/নাগারেভা/উইলিয়ামস – ১ টা করে উইকেট।
ফলাফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী ( সিরিজ ১-১ এ সমতা)