ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা-বের এক বছর পূর্তি আজ ২০ মে। অথচ এ প্রলয়ঙ্করি ঝড়ের শিকার
অনেক মানুষ আজো সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেই ক্ষতি।
জনপদে চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও খাবার পানির তীব্র হাহাকার। নিজের কিংবা সব হারিয়ে
অন্যের জমিতে কোন রকমে মাথা গোঁজার মত ঘর বেধে বাস করছে অনেকেই। নদী ভাঙ্গন সংস্কার
করা হলেও কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধ এখনও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। স্থায়ী টেকসই
বেড়িবাঁধের দাবি এলাকাবাসির।
এলাকাবাসি সূত্রে জানাযায়, আম্পানের রাতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি,
মৎস্য ঘের ও বাড়ি ঘরসহ লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছিল । আম্পানের তান্ডবে সর্বস্ব হারিয়ে
বেড়িবাঁধের উপর ঝুঁপড়ি বেঁধে আশ্রয় নিয়েছিলো কয়েক হাজার মানুষ। এখন বেড়িবাঁধ
নির্মাণে কাজ চলছে, কয়েক স্থানে কাজ শেষও হয়ে গেছে। তবুও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে
আসতে পারেনি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। যাদের জমি রয়েছে তারা নতুন করে ঘর বেধে
বসবাস করছেন। তবে অনেকেই এখনো রাস্তার পাশে ঝুঁপড়িতে রয়েছেন। এদিকে সরকারিভাবে
৭০ পরিবারকে দেয়া হচ্ছে ঘর। সরকারী ও এনজিও’র পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে তা
প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়নগুলোর সাথে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। আভ্যন্তরীন রাস্তার
বেহাল দশা। আজও মেরামত করা হয়নি অধিকাংশ রাস্তা। জরাজীর্ণ রাস্তা গাড়ি চলাচলের
অনুপযোগী। পায়ে হেটে কিংবা কোন রকমে মটর সাইকেল চালিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হয়
পথচারীদের। এখনও বহু পরিবার বসবাস করছেন ঝুঁপড়ি বেধে। জনপদে চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান
ও খাবার পানির তীব্র হাহাকার। দু‘মুঠো ভাতের জন্য জীবনের সাথে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে
তাদের।
কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। বিশেষ করে মহারাজপুর ইউনিয়নের
দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত বাঁধ রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন। কিছুদিন আগে সেখান
থেকে জোয়ারের পানি বাঁধ চুইয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এছাড়া পূর্ব মঠবাড়ি লঞ্চ ঘাট হতে
পবনার ক্লোজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। রিংবাধ
নির্মাণের পর থেকে এখনো পর্যন্ত রাস্তাটিতে কোন কাজ না করায় নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের
চেয়ে বৃদ্ধি পেলে লোকালয়ে উপচে পানি প্রবেশ করে। এলাকাবাসির দাবি জরুরি ভিত্তিতে এসব
এলাকায় কাজ না করা হলে যে কোন মূহুর্তে বাধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে।
সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালী গ্রামের পবনা রিংবাধের স্লোভে বসবাসকারি দেবাশীষ সানা বলেন,
দীর্ঘদিন রাস্তায় কাজ না করায় রাস্তার বেহাল দশা। একটু জোয়ার বেশি হলে রাস্তা ছাপিয়ে
জোয়ারের জল ভিতরে প্রবেশ করে। রাস্তায় কাজ না করলে এবছর বর্ষা মৌসুমে ভেঙ্গে যেতে পারে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালি গ্রামের মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, অধিকাংশ জমি
বছরে বছরে কপোতাক্ষের ভাঙ্গনে নদীতে চলে গেছে। যেটুকু ছিলো সেখানে কোন রকমে ঘর
বেধে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। আম্পান ঝড়ের রাতে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে গেছিলাম।
সকালে ফিরে এসে দেখি আমাদের ঘর বাড়ি নেই। বাঁধ ভেঙ্গে বাড়ির উপর দিয়ে খাল চলে গেছে।
পরে বাঁধ হলেও আমার ঘর বাঁধার জায়গা নেই। এখন পরের জায়গায় ঝুঁপড়ি বেধে বসবাস
করছি।