‘বাবা হয়ে কীভাবে সন্তানের লাশ বহন করব আমি। আমার মেয়ের অনেক কষ্ট হয়েছে। কত সময় চলে গেল এখনো আমার মেয়ের লাশটা পেলাম না। আমি আমার মেয়ের চেহারা না দেখে থাকতে পারিনি। এ শোক কীভাবে সহ্য করব আমি। আমার নিষ্পাপ মেয়ের কী অপরাধ ছিল।’
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালের বিছানায় বসে কান্নারত অবস্থায় কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে নিহত আট মাসের শিশু সুরাইয়া আক্তারের বাবা বাদশাহ মিয়া। সুরাইয়া বাদশাহ মিয়ার তৃতীয় সন্তান।
এর আগে বুধবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
ওই ভোটকেন্দ্রে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী এক সংবাদকর্মী বলেন, ঘটনার সময় আমি নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহের কাজে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। শিশুটিকে তার মা কোলে নিয়ে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা দেখতে এসেছিলেন। হঠাৎ দুপক্ষের হট্টগোলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা ইভিএমসহ ভোটের বাক্স নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকরা পুলিশকে বাধা দেন। কিছু সমর্থক পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তখন কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর একটি গুলি শিশুটির মাথায় লাগে। ঘটনাস্থলেই সে মৃত্যুবরণ করে।
নিহত সুরাইয়ার বাবা বাদশাহ মিয়া বলেন, নিজের কোনো বসতভিটা নেই। সরকারের দেওয়া ঘরে থাকি। আগে ঝাল মুড়ির দোকান করতাম। এখন সেটিও অসুস্থতার কারণে করতে পারছি না। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো মতো সংসার চালাই। গতকাল ভোটকেন্দ্রে ফলাফল জানার জন্য আমিও ছিলাম। হট্টগোল হওয়ার পর এসে দেখি আমার কলিজার টুকরা মাথার খুলি নেই। তখন আর ঠিক থাকতে পারিনি। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার বউ অসুস্থ হয়ে যায়। এখনো আমি এই শোক নিতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, আমার বউ ছিল আমার মেয়েকে নিয়ে। যখন ঝামেলা হয়েছিল তখন পাশের বাড়িতে মেয়েকে রেখে আমার বউ বাড়িতে যায়। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় আমার মেয়ের লাশ। এই লাশ আমি বহন করব কেমনে? কখন আমি আমার মেয়ের লাশ পাব। ১৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও লাশ পেলাম না।
পরিবারের কাছে শিশুটির মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, ঘটনাটির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর নিহত শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুরে পাঠানো হয়েছে৷ ময়নাতদন্তের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।