মিরসাইয়ে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরবরাহের জন্য হালদা নদী থেকে পানি ওঠালে নদীর কোনো সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। শনিবার (০২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত চীন সরকারের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া এলইডি বাল্ব বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, ‘মিরসরাইতে যদি ইকোনোমিক জোন করতে হয় তাহলে বিদ্যুৎ লাগবে, গ্যাস লাগবে, পানি লাগবে। এ সাপোর্টগুলো সরবরাহ করার জন্য আপনাদের সবাইকে সহযোগীতা করতে হবে। ভুল-বোঝাবুঝি করা ঠিক হবে না। হালদায় প্রতি সেকেন্ডে ৩৭০ কিউসেক পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেখান থেকে ৩ দশমিক ৭ কিউসেক পানি যদি উত্তোলন করা হয়, তাতে নদীর পানি প্রবাহের কোনো সমস্যা হবে না। এটা হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ হালদা নিয়ে রামপালের মত ভুল-বোঝাবুঝি এড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন মাস হালদায় মাছ প্রজনন হয়। এখানে উন্নয়নের ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণার কারণে যদি প্রকল্প ব্যাহত হয় তাহলে এর দায় সবাইকে বহন করতে হবে। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। ভুল-বোঝাবুঝি করলে কিছুই হবে না।’ তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কুমিল্লার উন্নয়ন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন, ঢাকার উন্নয়ন সবগুলোই কিন্তু একসাথে করতে হবে। ঢাকা যদি খারাপ থাকে, চট্টগ্রাম যদি বঞ্চিত হয় তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে না। সে কারণে সবগুলোর জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা নিয়ে কাজ করার অঙ্গিকার করতে হবে।’ দেশের স্বার্থে সমন্বয়ে জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মিরসরাইতে ইকোনোমিক জোন হবে, সেখানে ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবার জন্য একটা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইকোনোমিক জোনকে কার্যকরি করার জন্য আমাদের সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে। একেক জায়গায় একেকটা জিনিস পাওয়া যায়। এখন আমরা যদি সেখানে শিল্পনগরী করি তাহলে সেখানে পানি পাওয়া যাবে না। এ জন্য অন্য জায়গা থেকে পানি আনতে হবে। এক জায়গায় শ্রমিক পাওয়া যাবে আরেক জায়গায় পানি পাওয়া যাবে। এ জন্য সবগুলোকে সমন্বয় করতে হবে।’ মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে হালদা তীরে চট্টগ্রাম ওয়াসার নতুন পানি শোধনাগারের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ইতোমধ্যেই আপত্তি এসেছে। বর্তমানে বিদ্যমান দুটি পানি শোধনাগারে হালদা নদী থেকে দিনে ১৮ কোটি লিটার পানি তোলা হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি হলে দৈনিক আরও ১৪ কোটি লিটার পানি তোলা হবে। হালদা নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন করে হালদা থেকে যদি আরও পানি উত্তোলন করা হয়, তাহলে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা কমে লবণাক্ততা বেড়ে যাবে। এতে প্রাকৃতিক এই মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রে মা মাছের চলাচল ও ডিম ছাড়া বিঘ্নিত হতে পারে। তবে সরকারের তরফে বারবার বলা হচ্ছে হালদা-কর্ণফুলীর সংযোগস্থলের কাছাকাছি থেকে নতুন প্রকল্পের জন্য পানি উত্তোলন খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে যুগ্ম সচিব শাকিলা ফারজানার সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, স্থানীয় সরকারের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মিজানুর রহমান প্রমুখ।