সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে অন্তত ৭৪ জন (২১ শতাংশ) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন দুজন। অপরদিকে সরকারের মন্ত্রিসভার ৪৮ সদস্যের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন। তাদের মধ্যে একজন প্রতিমন্ত্রী মারা গছেন। সংসদ সদস্যরা বলেছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে দুর্যোগকালে তাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। তাই জনগণের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তাদের বেশি সংখ্যক সহকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংসদ সদস্যদের কারণকে যৌক্তিক বললেও বেশি সংখ্যক এমপির করোনা পজিটিভ হওয়ার পেছনে একাধিকবার পরীক্ষা করার কথাও উল্লেখ করেছেন তারা। সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত হন নওগাঁ-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। দেশে করোনা সংক্রমণের ৫২ দিনের মাথায় ৩০ এপ্রিল তার শরীরে ভাইরাস ধরা পড়ে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং প্রথম করোনা আক্রান্ত হন। সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মোহাম্মদ নাসিম এবং নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম মারা গেছেন। দেখা গেছে, ৩০ এপ্রিল নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার আক্রান্ত হওয়ার পর ১৬ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের এবাদুল করিমের করোনা শনাক্ত হয়। জুনে তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জন এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সরকারি দলের এমপি ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজারও ওই সময় করোনা হয়। এ মাসে সাবেক মন্ত্রী সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মোহাম্মদ নাসিম, গোপালগঞ্জ-৪ আসনের মুহম্মদ ফারুক খান, ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী গাজীপুর-১ আসনের আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী রংপুর-৪ আসনের টিপু মুনশি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সাবেক চিফ হুইপ ও মৌলভীবাজার-৪ আসনের উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, যশোর-৪ আসনের রণজিৎ কুমার রায়, জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খান (বর্তমানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী), চট্টগ্রাম-৮ আসনের মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান, নড়াইল-২ আসনের মাশরাফি বিন মুর্তজা, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরিশাল-৫ আসনের জাহিদ ফারুক, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক এবং সংরক্ষিত আসনের ২৫ জুন ফেরদৌসী ইসলাম জেসির করোনা পজিটিভ হয়। এদের মধ্যে মোহম্মদ নাসিম ১৩ জুন মারা যান। একই দিনে করোনায় মারা যান ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহম্মদ আবদুল্লাহ। জুলাইতে করোনা আক্রান্ত হন নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম, সিরাজগঞ্জ-৫ আব্দুল মমিন মন্ডল, নওগাঁ ৩-এর ছলিম উদ্দিন তরফদার, সাতক্ষীরা-২ আসনের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, টাঙ্গাইল-৮ আসনের জোয়াহেরুল ইসলাম ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এম এ মতিন। এদের মধ্যে ইসরাফিল আলম ২৭ জুলাই মারা যান। আগস্টে এক মন্ত্রীসহ ১১ জন এমপি করোনায় আক্রান্ত হন। তারা হলেন- মৌলভীবাজার-১ আসনের এমপি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৬ আসনের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, বিএনপির সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা, সংরক্ষিত আসনের সালমা চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও-১ রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও–২ আসনের দবিরুল ইসলাম, রাজশাহী-৫ আসনের মনসুর রহমান, টাঙ্গাইল-৭ আসনের মো. একাব্বর হোসেন, পটুয়াখালী-৩ আসনের এস এম শাহজাদা, মেহেরপুর-২ আসনের মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদ। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হন দিনাজপুর-২ আসনের এমপি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খুলনা-৬ আসনের আক্তারুজ্জামান বাবু, টাঙ্গাইল-২ ছোট মনির, শেরপুর-১ আসনের এমপি হুইপ আতিউর রহমান আতিক ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ অক্টোবরে তিনজন এমপি’র আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়। অন্যরা হলেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের মো. আবু জাহির এবং ফেনী-৩ আসনের জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। নভেম্বরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এমপি করোনায় আক্রান্ত হন। এ মাসে তিন মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী, একজন উপমন্ত্রী ও একজন হুইপসহ ২৩ জন এমপি আক্রান্ত হন। আক্রান্তরা হলেন বাগেরহাট-১ আসনের শেখ হেলাল উদ্দীন, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) ছানোয়ার হোসেন, ঢাকা-১০ আসনের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন,পাবনা-৪ আসনের নুরুজ্জামান বিশ্বাস, নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, ঢাকা-১৩ আসনের সাদেক খান, সিলেট-৪ আসনের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মুজিবুল হক চুন্নু, লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা-১২ আসনের আসাদুজ্জামান খান কামাল, বগুড়া-৩ আসনের নুরুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকা-১৭ আসনের আকবর হেসেন পাঠান (নায়ক ফারুক), গাজীপুর-২ আসনের এমপি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, কুষ্টিয়া-৩ আসনের মাহবুব উল আলম হানিফ, ঝিনাইদহ-৩ আসনের শফিকুল আজম খান চঞ্চল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট-১ আসনের ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজশাহী-৬ শহারিয়ার আলম, জাতীয় সংসদের হুইপ জয়পুরহাট-২ আসনের আবু সাঈদ আল মাহমুদ (স্বপন), বিএনপির এমপি ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নাদিরা ইয়াসমিন জলি ও তাহমিনা বেগম কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন। শিক্ষামন্ত্রী ও চাদঁপুর-৩ আসনেনর এমপি ডা. দীপু মনিসহ ডিসেম্বরে আট জন এমপির করোনা ধরা পড়ে। অন্যরা হলেন, নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, বগুড়া-১ সাহাদারা মান্নান, চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও পাবনা-৫ আসনের গোলাম ফারুক প্রিন্স। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, আমাদের সহকর্মীদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ স্পষ্ট। লকডাউনের সময় সব মানুষ যখন গৃহবন্দি, তখন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা বসে থাকতে পারিনি। আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে। জনসমাগমে যেতে হয়েছে। এ কারণেই আমাদের আক্রান্তের হার বেশি।আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা বেশি মানুষের সংস্পর্শে যাওয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এটা সত্য। তবে, এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে নমুনা পরীক্ষা। দেশের সব এমপিদের একাধিকবার নমুনা পরীক্ষা করাতে হয়েছে। সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কারণে কোনও উপসর্গ ছাড়াই তাদের নমুনা পরীক্ষা করাতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও পরীক্ষা করাতে হয়েছে। যার কারণে তাদের মধ্যে বেশি পজিটিভ পাওয়া গেছে।