মাত্র ৭ দিন আগেও জুমার নামাজের পর পরিবারের সবাই এক সঙ্গেই খেয়েছে। স্ত্রী অপেক্ষা করছিলেন স্বামী আর সন্তানের জন্য। বাচ্চা ছেলেগুলো নামাজের পর ছোটাছুটি আর একটু খুনসুঁটিতে ব্যস্ত ছিল। পুরো মহল্লার দোকানপাট আর অলিগলি ছিল হাঁকডাকে সরগরম।
ঠিক ৭ দিন পর সেই পশ্চিম তল্লার মহল্লাটিতে এখন অনেকটাই সুনসান নীরবতা। সেই বায়তুস সালাত জামে মসজিদের মাইক থেকেও ভেসে আসেনি মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেনের কণ্ঠে আজানের ধ্বনি।
ইমাম মাওলানা আব্দুল মালেকের বয়ানের দৃঢ় আওয়াজ আর সুমধুর কণ্ঠের তেলাওয়াতও শুনতে পাননি কেউ। কোনো কোনো বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছিল বুক কাঁপানো কান্নার শব্দ। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মসজিদের সেই অগ্নিকাণ্ড বদলে দিয়েছে পুরো মহল্লার চিত্র। আর আজীবন কান্নার জলে ভেসে গেছে ৩৮টি পরিবারের স্বপ্ন।
শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল অবধি এ ঘটনায় নিযুক্ত তদন্ত দলের তিতাস, ডিপিডিসিসহ কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষকেই ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। দুপুরে জুমার নামাজ পড়তে মহল্লার মুসল্লিরা গিয়েছিলেন আশপাশের মসজিদগুলোতে। কিন্তু সেই মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে এ সময় কাঁদতে দেখা গেছে অনেককেই।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, মসজিদে তালা লাগানো। গত শুক্রবার রাতেই ঘটেছিল সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
মসজিদের পাশে বসবাসরত আব্দুল মালেক জানান, ১ সপ্তাহ ধরেই মসজিদে আজান ও নামাজ বন্ধ রয়েছে। জুমার নামাজের আগে মসজিদটি পরিষ্কার করে নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে আমরা আশা করেছিলাম কিন্তু তা হয়নি। আশা করি আগামী জুমার নামাজ এখানে আদায় করা যাবে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, ক্রাইমসিন থাকায় এখানে এখনও অনেক আলামত আছে। তাই এখানে সবার প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে মসজিদ খুলে দেয়া হবে।
এদিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে যাওয়া ৩৮ জনের মধ্যে একমাত্র সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন মামুন। কিন্তু বিস্ফোরণের ঘটনায় বাড়ি ফেরা মামুন সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি আর পোড়া দেহের যন্ত্রণায় বিছানায় ছটফট করছেন শারীরিক ও মানসিক অশান্তি নিয়ে।
শুক্রবার দুপুরে তল্লা এলাকায় তার বাড়িতে তাকে দেখতে গেলে তিনি তার যন্ত্রণার কথা বলেন।
মামুন বলেন, সেদিনের সেই ভয়াবহ দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে। মনে হলে চমকে উঠি। মানুষের শরীরে আগুন জ্বলছিল। কী যে ভয়াবহ সেই দৃশ্য। চোখে পানি চলে আসে মনে হলেও। যন্ত্রণায় এখন কাতরাচ্ছি। হাতের পোড়া অংশে প্রায়শই জ্বালাপোড়া করছে। বিছানায় শুয়েই থাকি। সেই ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।
মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের রূহের আত্মার মাগফিরাত ও আহত চিকিৎসাধীনদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় জেলার সব মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদগুলোতে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনের ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং চিকিৎসাধীনরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন সেজন্য দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টায় ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম, শিশু, শিক্ষার্থী, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ফটো সাংবাদিকসহ ৩৯ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ৩১ জন মৃত্যুবরণ করেন।