বাংলাদেশে চিকিৎসাসহ বিভিন্নখাতে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে হাঙ্গেরি। এর মধ্যে এগ্রোফুড প্রসেসিং, বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা ও ফার্মাসিউটিক্যাল উল্লেখযোগ্য।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় একদিনের সফরে আসা হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিজারটো এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে এটাই কোনো দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।
বৃহস্পতিবার সরকারি সফরে ঢাকায় আসেন হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিজারটো। তিনি দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন।
সফরকালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে পিটার সিজিজারটো বৈঠক করেন। দুপুরে তার সম্মানে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ড. মোমেন ও পিটার সিজিজারটোর মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ড. মোমেন বলেন, কোভিড সময়ে এই প্রথম কোনো দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, ইলেক্ট্রনিকস, অ্যাগ্রো প্রসেসিংসহ বিভিন্ন সহযোগিতা খাত নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তিনি আরও বলেন, ইলেকট্রনিকস, প্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, নিউক্লিয়ার ও পর্যটন খাতে হাঙ্গেরির পারদর্শিতা আছে এবং তারা বিদেশে বিনিয়োগ করে। আমরা জানিয়েছি, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ভালো খাত ও সুযোগ রয়েছে।
ড. মোমেন জানান, রুশ কোম্পানি রোসটাম বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরিতে একই ধরনের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট বানাচ্ছে। এ বিষয়ে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের জন্য হাঙ্গেরি বাংলাদেশি ছাত্রদের ৩০টি স্কলারশিপ দেবে। এছাড়া চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ১০০টি স্কলারশিপ থাকবে।
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার বলেন, বাংলাদেশে এটিই প্রথম হাঙ্গেরির কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সমর্থনে বিভিন্ন প্রস্তাবে আমরা সমর্থন দিচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কনস্যুলেট অফিস খুলব।
বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য হাঙ্গেরির ব্যবসায়ীদের ২১ কোটি ইউরো ঋণ দেয়া হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, হাঙ্গেরির কোম্পানি এই বড় বাজারে ব্যবসা করতে পারবে এবং নতুন পরিস্থিতিতে তাদের বৈশ্বিক অবস্থান মজবুত হবে। এটি বাংলাদেশের জন্যও ভালো হবে। কারণ, আমরা উচ্চ প্রযুক্তি দিতে সক্ষম।
এর আগে পিটার সিজিজারটো সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোনে অ্যাগ্রোফুড প্রসেসিং, বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বিনিয়োগে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য একটি জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠনের বিষয়ে দুই মন্ত্রী আলোচনা করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, হাঙ্গেরির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টে (এফডিআই) ট্যাক্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ পণ্যের একটি বড় বাজার। এখানে হাঙ্গেরি বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে।
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাবে টিপু মুনশি বলেন, উভয় দেশের মধ্যে একটি জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠনের মাধমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের খাতগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। এ সেক্টরে প্রায় ৪৮ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। সরকার এ শিল্পকে সচল রাখতে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলকারখানা চালু রেখে রফতানি বাণিজ্য সচল রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের চাহিদা মোতাবেক বিশ্বমানের মাস্ক, পিপিইসহ বিভিন্ন মেডিকেল পণ্য রফতানি করছে। বাংলাদেশ কোভিড-১৯ প্রতিরোধকারী ফেব্রিক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এগুলোর চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ বিশ্বমানের মেডিকেল পণ্য উৎপাদন করে প্রায় ১৪২টি দেশে রফতানি করছে।