কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস- ইআরপিপি প্রকল্পেও কেনাকাটায় বড় ধরনের পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় ৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকার মাস্ক ও ইনফ্রায়েড থার্মোমিটার কেনার ক্ষেত্রে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকাই অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়।
শুধু তা-ই নয়, প্রচলিত ক্রয়নীতির কোনো কিছুই অনুসরণ না করে, এমনকি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এনওসি ছাড়াই চোরাচালানের মাধ্যমে চীন থেকে নিয়ে আসা হয় নিম্নমানের মাস্ক ও থার্মোমিটার।
ফলে দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের করের অর্থের মোটা একটি অঙ্ক হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও এতে আরও অনেক অনিয়মের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার বিকল্প নেই।
আশার কথা, এরই মধ্যে এ অর্থ লোপাটের বিরুদ্ধে র্যাবের মাধ্যমে মামলা হয়েছে এবং র্যাব বিষয়টি তদন্ত করছে। প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু স্বচ্ছভাবে তদন্ত করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।
উদ্বেগের বিষয়, কেবল যে ইআরপিপি প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে তাই নয়; করোনাকালীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন কেনাকাটায় অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বস্তুত কেবল করোনাকালীন নয়, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বড় ধরনের সমস্যা জেঁকে বসেছে।
করোনা মহামারীর সময় স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রকাশ্যে এসেছে, এই যা। যেমন- করোনার ডিউটিতে থাকা ডাক্তারদের জন্য নকল মাস্ক সরবরাহ, ডাক্তারদের খাবার ও নাস্তার জন্য অবিশ্বাস্য বিল তৈরি করা, নতুন নিয়োগ পাওয়া ডাক্তার ও নার্সদের নিয়োগ ও পদায়নে অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার মতো জঘন্য অনিয়ম সামনে এসেছে এ সময়ে।
এমনকি স্বায়ত্তশাসিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও নকল ও অমানসম্মত মাস্ক সরবরাহের ঘটনা ঘটেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এগুলো স্বাস্থ্য খাতে বছরের পর বছর চলমান দুর্নীতি-অনিয়মের প্রচলনকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।
করোনার আগে ফরিদপুর মেডিকেলের পর্দা কেলেঙ্কারি, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল ও হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে কয়েকগুণ বেশি দামে বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটা এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পে অস্বাভাবিক দামে বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রস্তাব থেকে বিষয়টি অনুমান করা যায়।
স্বাস্থ্য খাতে এমন নৈরাজ্যমূলক অবস্থা যেমন একদিনে তৈরি হয়নি, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জেঁকে বসা অনিয়ম-দুর্নীতির মূলোৎপাটনও সম্ভব নয়। এ অবস্থায় করোনায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া নাজুক মেডিকেল খাতের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকারি তো বটেই, আমাদের স্বাস্থ্য খাতের বেসরকারি অংশেও অনিয়ম-দুর্নীতি ভর করেছে। করোনার টেস্ট না করেই রিপোর্ট দেয়া, সরকারের কাছ থেকে বিল নেয়ার পরও অসহায় রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায়ের ঘটনা দেখা গেছে কয়েকটি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে।
দেশে সরকারি-বেসরকারি হাজারও হাসপাতাল-ক্লিনিক থাকার পরও ফুরসত পেলেই রোগীরা যে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার জন্য চলে যায়, তার কারণ এসব অনিয়ম-দুর্নীতি। সময় এসেছে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে মৌলিক অধিকার হিসেবে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার।