বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে গত ৫ বছরে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বর্তমানে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান রয়েছে ৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। রেলের উন্নয়নে এত যে টাকা ঢালা হচ্ছে, তাতে লাভ কিছুই হচ্ছে না। রেল একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এই লোকসান পুষিয়ে নেয়ার জন্য ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে, তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। স্বাধীনতার পর ১৮ বার রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, উদ্দেশ্য লোকসান কমানো। সর্বশেষ ২০১৬ সালে গড়ে ১৫ এবং তারও আগে ২০১২ সালে ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়।
এতদসত্ত্বেও গত ৬ বছরে রেলে লোকসান হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই লোকসানের পরিমাণ ২১শ’ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
প্রকৃতপক্ষে রেলের ভাড়া বাড়িয়ে লোকসান কমানোর যে প্রবণতা, তা ফলদায়ক হতে পারে না। এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে অন্য কোথাও। বস্তুত রেলের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা না হলে, রেলের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত না করা গেলে এবং যাত্রীসেবার মান না বাড়ানো হলে রেলের লোকসান কমানো সম্ভব নয়।
উল্লেখ করা যেতে পারে, রেলের ৫ হাজার একর জমি বেদখল হয়ে আছে। এসব জমি উদ্ধার করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা গেলে কোটি কোটি টাকা আয় হতো। অথচ বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারের কোনো চেষ্টাই লক্ষ করা যাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক আরেকটি সিদ্ধান্তে রেলের আয় কমেছে। সব আন্তঃনগরসহ কিছু ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট পাওয়ার পদ্ধতি অনেকেই জানেন না। বেশিরভাগ যাত্রী মোবাইল বা অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় নেই। তাই তারা টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন না।
এতে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকছে। এটিও লোকসানের অন্যতম কারণ। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হল দুর্নীতি। রেলের দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। এ দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে।
আমরা মনে করি, রেলের ভাড়া বাড়িয়ে লোকসান কমানোর পথ পরিহার করে কীভাবে এই লোকসান কমানো যায় অথবা রেলকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়, সে ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
রেলের জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ করে রেলের আয় বাড়ানোর চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। মোট কথা, রেলের মতো একটি জনপ্রিয় পরিবহনকে বছরের পর বছর লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই না আমরা।