টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের বড় বড় অপরাধী ও দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনৈতিক ব্যাক্তিকে পাসপোর্ট দিচ্ছে ইউরোপেরে দেশ সাইপ্রাস। ২০১৭ সাল থেকে ১৯ সালের মধ্যে কয়েক ডজন পাসপোর্ট বিক্রি করেছে দেশটির সরকার। রোববার (২৪ আগস্ট) কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা’র প্রকাশিত এক অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনকে ‘দ্যা সাইপ্রাস পেপারস’ নামে নাম করণ করেছে আল-জাজিরা।
সাইপ্রাস সরকারের ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে দেখা যায় অন্তত ৭০টি দেশের কয়েক ডজন নাগরিককে “গোল্ডেন পাসপোর্ট” দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। এই পাসপোর্ট যারা কিনেছেন তাদের মধ্যে অপরাধ, দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে আল-জাজিরা। প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ, সংগঠন ও জোট সাইপ্রাস সরকারের এ কাজের নিন্দা জানিয়েছে। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম ও বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ থেকে ১৯ সাল পর্যন্ত এক হাজার ৪শর’ও বেশি পাসপোর্টের আবেদন মঞ্জুর করেছে সাইপ্রাসের সরকার। বেশিরভাগ আবেদন এসেছে দক্ষিণ এশিয়া ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে। তার মধ্যে রাশিয়া, চীন এবং ইউক্রেণ উল্লেখযোগ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভূক্ত হওয়ায় ইউয়োরেপের অন্যসব দেশে (২৭টি দেশ) ভ্রমণ, কাজ ও আর্থিক লেনদেনে এই পাসপোর্ট খুবই কার্যকরি। তাই সাইপ্রাস সরকারের নীতি নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে।
সাধারণত সাইপ্রাসের পাসপোর্ট পেতে গেল অতিতে কোনো ধরণের অপরাধের রেকর্ড না থাকার স্বর্ত রয়েছে। বিনিয়োগের স্বর্ত রয়েছে অন্তত ২৫ লাখ মার্কিন ডলার বা সমপরিমান অর্থ মূল্যের সম্পদ ক্রয় করার। অন্তত ৮ বছর যাবত ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাইপ্রাসের এই ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ বিক্রির সমালোচনা করে আসছে। এটি বন্ধেও নানা চাপ দিচ্ছে। তবে এবার গোপন নথি থেকে প্রকাশ পেলো নিজেদের আইন ভেঙ্গে এই পাসপোর্ট বিক্রির তথ্য। আইন অনুযায়ী অপরাধের রেকর্ড আছে এমন কাউকে পাসপোর্ট না দেয়ার যে আইন রয়েছে সেটি এখানে মানা হয়নি। পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে বিভিন্ন দেশের দাগি আসমিদেরও। তবে, পাসপোর্ট কেনা ব্যাক্তিরা শুধু নন, তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই পাসপোর্ট পেয়েছেন।
তবে, সাইপ্রাসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, ‘আইন বা নীতি ভঙ্গ করে কাউকে পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে না।’
পাসপোর্ট কিনেছেন এমনদের মধ্যে আফগানিস্তানের জাতীয় সংসদের স্পিকার মির রহমান রহমানিও রয়েছেন। তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, নিজের স্ত্রী ও তিন কণ্যার জন্যও পাসপোর্ট কিনেছেন। আবার অন্য একটি পরিবারকে পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করেছেন। রহমানি আফগানিস্তানের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তিনি আফগান সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তেলে ব্যাবসায় মধ্যস্থতা করেছে দীর্ঘ সময় ধরে। সেখানে বড় ধরণের দুর্নীর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগও রয়েছে।