সীমান্তে চীনে সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে ভারত। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার খোরাক যোগান দেয় ভারতীয় কয়েকটি মিডিয়া।
এমন আলোচনার মধ্যেই সম্প্রতি দুই দিনের ঝটিকা সফর করে গেছে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বাংলাদেশে হঠাৎ এই সফর নিয়েও আলোচনা কম হচ্ছে না।
সফলকালে তিনি দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হয়। হর্ষবর্ধন শ্রিংলার দাবি- দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ বার্তা নিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। তবে ঢাকায় তার সফরের সম্মুখ আলোচনা ছিল করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে।
দ্বিপক্ষীয় এই আলোচনায় ছিল না বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি। ছিল না ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) নিয়েও।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব।
বাংলাদেশ-ভারতের বৈঠকে তিস্তা, এনআরসি ও সিএএর অবতারণা শেখ হাসিনা করেছিলেন কি না, তা জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র বলেন, ওই বিষয়গুলো ওঠেনি।
ব্রিফিংয়ে এই সফর নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। সফরে কোন কোন বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে, সে বিষয়ে মুখপাত্র বিস্তারিত জানান। করোনা পরিস্থিতি ছিল সেগুলোর অন্যতম। মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পররাষ্ট্রসচিব শ্রিংলা কোভিড প্রতিষেধক উদ্ভাবন ও তা বণ্টনের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। ঠিক হয়েছে, দুই পক্ষই এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে।
সফর নিয়ে মুখপাত্র আরও বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী পাইপলাইন, আখাউড়া-আগরতলা, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ও খুলনা-মোংলা রেললাইনের কাজ আগামী বছর শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক পর্যালোচনার জন্য শিগগিরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ পরামর্শদাতা কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক ডাকা হবে। চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনায় উচ্চপর্যায়ের এক কমিটিও গঠন করা হবে।
এই সফরে নিরাপত্তা, সীমান্ত অপরাধ বন্ধ, কাঁটাতারের বেড়া ও রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবর্তন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে মুখপাত্র জানান।
দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি সম্প্রতি ভারতের আটকা পড়া তাবলিগ জামায়াতের সদস্যদের নিয়েও কথা হয়। তিনি বলেন, ভারতে আটক তাবলিগ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশে ফিরে গেছেন। বাকিদেরও দ্রুত ফেরানো হবে। দুই দেশের মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল শুরুর প্রস্তাবে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বহুমাত্রিক অগ্রগতির প্রসঙ্গে উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, এই সফর আরও একবার প্রমাণ করেছে যে ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিতে বাংলাদেশের স্থান কতটা আগে।
আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ নিয়েও কথা বলেন অনুরাগ শ্রীবাস্তব। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ উদ্যাপনে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ উপলক্ষে দুই দেশ যুগ্মভাবে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে।