ঝিনাইদহের মহেশপুর আযমপুর ইউনিয়নের বিদ্যাধরপুর গ্রামের মাঠে আগাম জাতের শিম চাষ করে বাজিমাত করেছেন শিক্ষিত যুবক আরিফুল ইসলাম ও তার কৃষক পিতা ওহিদুল ইসলাম। ইতিমধ্যে এক বিধা জমি থেকে লক্ষাধিক টাকার শিম বিক্রি করেছেন। শিম বারো মাসি সবজি না হওয়ায় আনসিজনে ভাল দাম পাওয়ার আসায় বেগুনি ফুলের ছায়ায় শিমের রাজ্যে ব্যস্ত সময় কাটান তারা। পাইকারী প্রতি কেজি শিমের দাম পড়ে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। বর্তমানে ফলন কিছু কম হলেও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে শিমের পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করেন তারা। বাবা ছেলের শিমের আবাদ দেখে শিম চাষে ঝুঁকছেন এলাকার আরও অনেকে। ওই গ্রামের অধিকাংশ জায়গায় দেখা মিলবে জিনজিরা ও ইসরা-১ জাতের শিমসহ নানা জাতের শিম চাষের দৃশ্য। প্রথমে জমি উপযোগী করা, বীজ রোপণ, সার-কীটনাশক ও মাচা তৈরীসহ একবিঘা জমিতে মোট খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সপ্তাহ খানেক পরপর বাজারে তোলা হয় চাষ করা শিম। এসব শিম স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি নেওয়া হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফসলের মাঠের পাশে রয়েছে বাজার। সেখানে প্রতিদিন পাইকারী ক্রেতাদের আগমন ঘটনায় পুরোদমে চলে বেচা-কেনা। পাইকারীতে চড়া মূল্য পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে খোলা বাজারে এই শিমের দাম আকাশছোঁয়া। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলায় এবছর ৪ শত হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করা হয়েছে। এব্যাপারে বিদ্যাধরপুর গ্রামের শিক্ষিত যুবক মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিভাগে পড়শোনা শেষ করে একটি বায়িং হাউজে উচ্চ বেতনে চাকুরি পেয়েছিলাম। দুই বছর চাকুরি করার পর চলে আসলো করোনাভাইরাস। এরপর বাড়িতে এসে পিতার সাথে চাষ শুরু করে ভাল সাড়া পাই। কয়েকমাস পর কোম্পানীতে ফিরে আসার জন্য আমাকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পিতার সাথে গ্রামের মাঠে চাষ করছি। চাষে ভাল সাড়া পেয়েছি এবং এলাকার অনেক শ্রমিক আমার ক্ষেতে কাজ করে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন। সেই সাথে স্বাধীনভাবে চলতেও পারছি। পিতা-মাতাসহ পরিবারকে সময় দিতে পারছি। সেকারণে চাকুরিতে ফিরে যাইনি। তিনি বলেন, আমার মতো কৃষি কাজকে ছোট করে না দেখে শিক্ষিত যুবকেরা চাকুরির পিছনে না ছুটে এবং অযথা ঘুরে না বেড়িয়ে চাষে মনোযোগী হলে স্বল্প সময়ে সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তবে ইচ্ছা শক্তিই বড়। ইচ্ছা শক্তি না থাকলে কোন কিছুতেই সফলতা আসবে না। তিনি আরও বলেন, আমার স্বপ্ন অনেক বড়। কিন্তু টাকার অভাবে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি না। তাই সরকার যদি সহজ শর্তে লোনের ব্যবস্থা করে তাহলে আমি আধুনিক পদ্ধিতে আরও বড় আকারে চাষ শুরু করতে পারতাম। এতে করে দেশে সবজির চাহিদা মোটানোসহ এলাকার অনেক বেকার সমস্যার সমাধান হতো। কৃষক বাবা ওহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে করে চাকুরিও করছিল। আমার সাথে কৃষি কাজ করছে। ক্ষেতে কাজ করার সময় বাপ-বেটা গল্প করতে করতে করতে কখন সময় চলে যায় ঝুঝতে পারি না। এখন চাষে ভাল লাভও দেখতে পারছি। এবার অতিবৃষ্টির ফলে সবজি ক্ষেতে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এখন অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে। আর ছেলেকে সাথে পেয়ে আমিও খুব খুশি। সেজন্য কোনো চাকুরিতে যেতে দিতে চাচ্ছি না এবং ছেলে মেধাবী ছাত্র হওয়া স্বত্ত্বেও কোনো চাকুরিতে যেতে আগ্রহী না। কারণ এক সময় আমার ছেলে এই চাষ থেকে ভাল উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে। আমাদের বাপ-বেটার চাষ দেখে এলাকার অনেকেই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। এটাই আমার কাছে বড় সফলতা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় জানান, চলতি বছরে অতিবৃষ্টির ফলে কৃষকদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হলেও উৎপাদনে কোন কমতি হবে না। শিক্ষিত যুবক ও পিতা মিলে আগাম শিম চাষ করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিয়মিত সেখানে মনিটরিং ও কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সবাই চাকুরির পিছনে না ছুটে স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষিতেই নিজেদের গড়ে তোলা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।