নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটটি পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশের তিন সদস্যের গোয়েন্দা দল। এই ফ্ল্যাটটিতেই খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য মো. আনোয়ারুল আজিম আনার। ঘটনা তদন্তে ঢাকা থেকে ডিবির তিন সদস্যের একটি দল রোববার সকালে কলকাতা পৌঁছেছে। ডিবির এ টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। বিকালেই ঘটনাস্থলে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন তারা। ফ্ল্যাটের খাটের কোনায় লেগে থাকা রক্ত ও পোশাক থেকে ফরেনসিক পরীক্ষায় কী পাওয়া গিয়েছে তার রিপোর্টও কলকাতার গোয়েন্দাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবেন ঢাকার গোয়েন্দারা।
এদিন পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির কাছ থেকে পাওয়া বহুতলের সেদিনকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। বিশেষ করে যে ফুটেজে ১৩ মে আনোয়ারুল আজিমকে এক মহিলার সঙ্গে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে সেটি একাধিকবার খতিয়ে দেখেন বাংলাদেশি গোয়েন্দারা।
জানা গেছে, কলকাতায় পৌঁছেই বাংলাদেশের তিন সদস্যর দলটি প্রথমেই নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেলে উঠেন। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন।
এ পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা কী কী তথ্য জেনেছেন, কসাই জিহাদ হাওলাদারকে জেরা করে কী কী সূত্র পাওয়া গিয়েছে তার যাবতীয় বিষয় আলোচনা করেন। দুদেশের গোয়েন্দারা এখনো পর্যন্ত ধৃতদের জেরা করে কী কী পেয়েছেন সেই তথ্য বিনিময় করেন।
গ্রেফতার কসাই জিহাদ হাওলাদার নিউটাউন লাগোয়া ভাঙড়ের যে বাগজোলা খালে দেহাংশ প্যাকেটে করে ফেলে দিয়েছিল বলে জানিয়েছে সেখানেও হারুন অর রশীদরা যাবেন। তবে এদিন ঘূর্ণিঝড় রেমেলের জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সন্ধ্যায় আ ভাঙড় যাননি বাংলাদেশি গোয়েন্দারা। সোমবার দুপুরের পর আবহাওয়ার উন্নতি হলে ওই খালের কাছে যেতে পারেন। শুধু তাই নয়, ধৃত কসাই জিহাদ হাওলাদারকেও জেরা করতে পারেন বলে সূত্রের খবর।
খুনের পেছনের মূল কারণ কি রয়েছে, তা খুঁজে বের করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি। সিআইডির হাতে গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদারকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নে হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, ‘যদি অপরাধ একই দেশে সংঘটিত হতো; সেক্ষেত্রে আমরা আসামিদের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু দেশ ভিন্ন; তাই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন কথা বলেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে দুদেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
এদিকে এমপি মো. আনোয়ারুল আজিমের রহস্যজনক খুনের ১৪ দিন পরও মরদেহের সন্ধান পাননি তদন্তকারী গোয়েন্দারা। কসাই জিহাদ হাওলাদার গ্রেফতার হলেও হদিস মেলেনি সাংসদের দেহ ৮০ টুকরো করার কাজে ব্যবহত ছুরি বা কাঁচির।
ডিবির তিন সদস্যের দলটি দমদম বিমানবন্দরে নেমে সংবাদমাধ্যমকে দলের প্রধান জানিয়েছেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের চক্রান্তকারী ও হত্যায় লিপ্ত সবাই বাংলাদেশি। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন।’
কলকাতা পুলিশ ও ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দারা যৌথভাবে এবং বোঝাপড়া করেই তদন্তের কাজ করছেন বলেও জানান হারুন অর রশীদ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, শাহীন বর্তমানে আমেরিকায় আছে বলে অনুমান। এজন্য প্রশাসনের শীর্ষমহলের সম্মতি নিয়েই ইন্টারপোলের মাধ্যমে শাহীনকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
বিমানবন্দরে হারুন অর রশীদ বলেন, “সাংসদ আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের ‘এক্সট্রা টেরিটোরিয়াল অফেন্স সেকশনের’ আওতায় তদন্ত করা হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাংসদকে ভয়াবহভাবে কলকাতায় খুন করা হয়েছে ঠিকই৷ খুনের পর তার দেহ টুকরো-টুকরো করে লোপাট করে দিয়েছে অপরাধীরা৷ এ খুনের মূল অভিযুক্ত, তার সহকারী ও পুরো ষড়যন্ত্র যারা বাস্তবায়িত করেছে, সবাই বাংলাদেশি। এমনকি এ হত্যার পরিকল্পনাও করা হয়েছে বাংলাদেশে বসেই৷’ তবে যেহেতু বিদেশের মাটিতে খুন হয়েছে সেখানকার আইন ও নীতিও মানতে দুদেশের শীর্ষস্তরেও কথা বলা হবে বলে এদিন ইঙ্গিত দেন তিনি। লাশ খুঁজে পাওয়া নিয়ে হারুন অর রশীদ জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিআইডি ইতোমধ্যে অনেক কাজ করছে, তদন্তে অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা আশা করি, খুব দ্রুত তারা এ হত্যার সব তথ্য পেয়ে যাবেন।’