পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও মেয়ের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ (ক্রোক) করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করারও আদেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন গেল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালত যে আদেশ দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন। আদালতের আদেশে রিসিভার নিয়োগ ও সম্পদ জব্দে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়ার বিষয়ে আজ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, মেয়ে ও কয়েকজন স্বজনের সম্পত্তি ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন। ওইদিন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছিলেন, আদালত বেনজীর আহমেদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং গোপালগঞ্জের জমির ৮৩টি দলিল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ এই সময়ে টাকা পয়সা ও জমি হস্তান্তর করা যাবে না। এরপর শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব জব্দের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়া হবে। রিসিভার নিয়োগের বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হবে। এসব পদক্ষেপ আজ রবিবার নেয়া হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করলেও তা নিশ্চিত করতে পারেননি। এর আগে বেনজীরের সম্পদের অনুসন্ধানে একটি কমিটি করার কথা গত ২২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, গণমাধ্যমে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এরপর ২৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক আদেশে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়টি হলফনামা আকারে দুই মাস পর জানাতে দুদককে নির্দেশ দেন। বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় র্যাবের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এই বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন। যার মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখন আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন বেনজীর আহমেদ। অবশ্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ২০২২ সালের আগস্টে বেনজীর আহমেদ জাতিসংঘের পুলিশপ্রধান সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। তবে সম্মেলনের কার্যক্রমে অংশ নেয়ার বাইরে ওই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোথাও তিনি যেতে পারেননি।