হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানাধীন স্বজনগ্রাম এলাকায় বসবাসকারী সাজু মিয়া (৫০) তার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে। উক্ত লাঠিয়াল বাহিনী সংঘবদ্ধভাবে লাখাই থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় দাঙ্গাবাজি, মারামারি, ভূমি দখল ও প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল। তাদের এহেন কার্যকলাপে কেউ বাঁধা প্রদান করলে তারা উক্ত বাঁধা প্রদানকারীকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত। গত ৩১/০৩/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক সকাল ১০:০০ ঘটিকায় উল্লেখিত লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যতম নেতা সাজু মিয়া (৫০)সহ আরো ৩-৪ জন স্বজনগ্রাম এলাকার একটি রাস্তার পাশ হতে মাটি কেটে তাদের নিজের জমিতে ভরাট করছিল। একই এলাকায় বসবাসকারী ভিকটিম রুকন উদ্দিন ও তার ভাই আশরাফ উদ্দিন বিষয়টি দেখে সাজুকে বলে যে, এভাবে রাস্তা থেকে মাটি কাটলে রাস্তার ক্ষতি হবে। রুকন উদ্দিনের উক্ত কথায় সাজু মিয়া ও মফিজ মিয়াসহ ৩-৪ জন ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হাতে থাকা কোদাল নিয়ে রুকন উদ্দিন ও আশরাফ উদ্দিনের উপর আক্রমন করার জন্য উদ্ব্যত হলে তাদের শোর-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে সাজুদেরকে নিবৃত করে। অতঃপর উক্ত গ্রামের মুরুব্বিরা এসে তাদের বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। পরবর্তীতে সাজু ও মফিজ তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ভিকটিম রুকনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। যার ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন ৩১/০৩/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক বিকাল ১৬:০০ ঘটিকায় সাজু, মফিজ ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর ৩০-৪০ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্র (রাম দা, ফিকল, কুচারশলা, লোহার রড ও লাঠি) নিয়ে রুকন উদ্দিনের বাসায় সামনে দাড়িয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। গালিগালাজ করার একপর্যায়ে ভিকটিম রুকন উদ্দিন বাসা থেকে বেরিয়ে আসলে সাজু ও মফিজসহ অপরাপর আসামিরা তাদের কাছে থাকা রাম দা, ফিকল, কুচারশলা, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে রুকন উদ্দিনকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে তার চোখ, মাথা, কোমর ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে উল্লাস করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। উক্ত ঘটনার পর রুকনের পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় রুকনকে গুরুতর রক্তাক্ত আহত অবস্থায় লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্যকপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুকনের অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানকার চিকিৎসক রুকনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতেল রেফার্ড করেন। উক্ত হাসপাতালের চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রুকনের অবস্থা অশংখ্যাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে রুকনকে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে সেখানে আই.সি.ইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ০৫/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক মাঝরাত ০১:১০ ঘটিকায় রুকন মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৃত রুকন উদ্দিনের ছেলে আলমগীর মিয়া বাদি হয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানায় সাজু, সাদির ও মফিজসহ ২০ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গতকাল সকাল ০৭:৪০ ঘটিকায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই এলাকায় চাঞ্চল্যকর রুকন উদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী ১। সাজু মিয়া (৫০), পিতা-মৃত আম্বর আলী, সাং-স্বজনগ্রাম, থানা-লাখাই, জেলা-হবিগঞ্জসহ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত পলাতক ১০ জন আসামিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামীদের নাম ২। ছাদির মিয়া (৬০), পিতা-মৃত আম্বর আলী, ৩। আঃ রহিম (৪৮), পিতা-মৃত আম্বর আলী, ৪। মফিজ মিয়া (৪২), পিতা-মৃত আম্বর আলী, ৫। সিজান মিয়া (৪২), পিতা-ছাদির মিয়া, ৬। শুকুর মিয়া (৩৯), পিতা-ছাদির মিয়া, ৭। সালাহ উদ্দিন (৩০), পিতা-ছাদির মিয়া, ৮। আকাশ মিয়া (২৮), পিতা-ছাদির মিয়া, ৯। হাদিছ মিয়া (২২), পিতা-সিজান মিয়া, ও ১০। নিজাম উদ্দিন (৪৫), পিতা-আব্দুর রাজ্জাক, মাতা-মোছাঃ রহিমা বেগম, সর্বসাং-স্বজনগ্রাম, থানা-লাখাই, জেলা-হবিগঞ্জগন’দের বলে জানা যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা উক্ত হত্যাকান্ডে তাদের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।