বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান তার সার্টিফিকেট জালিয়াতির বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে কিছু সাংবাদিক ও দুদকের কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
শনিবার (১১ মে) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
ডিবিপ্রধান বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানসহ বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তারা বছরের পর বছর টাকার বিনিময়ে যেসব সনদ ও মার্কশিট বিক্রি করেছেন, বিক্রি করা সনদগুলো কীভাবে শনাক্ত করা যায়, সেই তথ্য শামসুজ্জামান আমাদের দিয়েছেন। আমরা সেই তথ্য বোর্ডের কাছে দেব, যাতে তারা সেগুলো বাতিলের ব্যবস্থা নেয়। পাশাপাশি বুয়েটের এক্সপার্টদের যুক্ত করে কাজটি কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শামসুজ্জামান প্রায় পাঁচ হাজার মানুষকে জাল সনদ দিয়েছেন। এমনকি তার সঙ্গে বোর্ডের বহু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও জড়িত রয়েছেন বলেও জানান হারুন অর রশীদ।
সংবাদিক ও দুদক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে শামসুজ্জামান সনদ বিক্রি করে আসছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয় রমজানের শেষের দিকে। তিনি আমাদের কাছে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় অনেক সাংবাদিক তাকে ফোন দিয়ে ঈদের সালামি চেয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।
তিনি বলেন, শামসুজ্জামান খোলামেলাভাবে জানিয়েছেন, পদে থাকতে তার অনেককে ম্যানেজ করতে হয়েছে। দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে তিনি জানিয়েছেন কোন সাংবাদিককে কখন, কীভাবে কত টাকা দিয়েছেন। আমাদের ডিবির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
কোনো সংবাদিক যদি শামসুজ্জামানের মুখোমুখি বসে কথা বলতে চান, আমরা তাকে সেই সুযোগ দেব। আমরা মনে করি, অন্যায়ভাবে কেউ হয়রানির শিকার না হোক। পাশাপাশি দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আমরা তাদেরও বলেছি, দুদক সম্পর্কে শামসুজ্জামান যে তথ্য দিয়েছেন, চাইলে আপনারাও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।
দুদক কর্মকর্তারা শামসুজ্জামানের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, শামসুজ্জামান মনে করেছেন সাংবাদিক ও দুদক অনিয়ম তদন্ত করে। তাই তারাও যদি তার পাশে থাকে তাহলে তার যে সনদ বাণিজ্যটা বড় আকারে করতে পারবেন। সে কারণেই তিনি এই নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।