কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবার গ্যাং লিডার বা পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতারে মাঠে নামছে পুলিশ। ইতোমধ্যে তাদের নাম ও রাজনৈতিক পদ-পদবিসহ বিস্তারিত পরিচয় চেয়ে বিভিন্ন থানায় চিঠি দিয়েছে ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ)। এতে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকাও হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা মিলেছে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজি, জমিদখল, আধিপত্য বিস্তারে একাধিক গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি বা সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। এমনকি ইভটিজিং বা প্রেমঘটিত কারণেও কিশোরদের অনেকে হত্যার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এতে রাজধানীর অপরাধ পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সূত্র জানায়, চলতি মাসে ডিএমপির একাধিক সভায় কিশোর গ্যাং নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। এতে কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা বা পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়। পরে ২০ মার্চ ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিভিন্ন থানা এলাকায় সক্রিয় কিশোর গ্যাং ও তাদের পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদারদের নাম পাঠাতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএমপির নির্ধারিত মেইলে বা বিশেষ বাহকের মাধ্যমে তালিকা পাঠাতে হবে। এজন্য মার্চের ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত ছকে মোট ৮ ধরনের তথ্য জানাতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় সক্রিয় গ্যাং লিডার ও গ্যাংয়ের নাম, অপরাধের স্পট, পৃষ্ঠপোষক বা বড় ভাই, সদস্য সংখ্যা, নাম, অপরাধের ধরন এবং মামলা ও জিডির পরিসংখ্যান। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিএমপির নয় বিভাগের ডিসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, যে কোনো মূল্যে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিশেষ করে যারা কিশোর গ্যাং লালন-পালন করেন অর্থাৎ যারা গডফাদার তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে অনেকের নাম পাওয়া গেছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী বা অন্য কোনো পরিচয়ে কেউ ছাড় পাবে না। সূত্র জানায়, কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার হিসাবে ইতোমধ্যে রাজধানীর বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীর ওপর নজর রাখছে পুলিশ। কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার হিসাবে উত্তরা পশ্চিম থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিলুজ্জামান ওরফে বিপুল ও যুবলীগ নেতা কবির হাসান ওরফে ভাগিনা কবিরের নাম উঠেছে পুলিশের খাতায়। স্থানীয়রা বলছেন, কবির হাসান ওরফে ভাগিনা কবির ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এক এমপির ভাগিনা পরিচয়ে বেপরোয়া ছিলেন। উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরে অবৈধ ফার্নিচার মার্কেটের চাঁদাবাজিতে কিশোর গ্যাং ব্যবহার করেন তিনি। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা বিপুল এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা হাজি ইফতেখারুল ইসলাম ওরফে জুয়েল ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শরিফুর রহমান একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে পরিচিত। সূত্র জানায়, জুয়েলের অধীনে ১১, ১২, ১৩ এবং তুরাগের রানা ভোলা এলাকায় একাধিক কিশোর বাহিনী সক্রিয়। এর মধ্যে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মাহবুবুল আলম ওরফে প্রিন্স, শেখ হুমায়ন কবির, নজরুল ইসলাম ওরফে বাবু, নাজমুল করিম ওরফে কুজা বাবু এবং আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে একশ্রেণির কিশোর গ্যাং এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। এছাড়া ১০ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন রানা ভোলা এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছেন তুরাগের স্বঘোষিত যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান ওরফে প্রিন্স নাজমুল। তার অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তবে সম্প্রতি মাদক মামলায় আসামি বদল কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নাজমুল এলাকাছাড়া। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ৫১ নম্বর কাউন্সিলের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। বক্তব্য চেয়ে তার মোবাইলে খুদে বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি এতে সাড়া দেননি। বক্তব্য জানার জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুবলীগ নেতা হাজি এফতেখারুল ইসলাম জুয়েলের নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এছাড়া বক্তব্য জানার জন্য তুরাগের যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান ওরফে প্রিন্স নাজমুলের উত্তরার বাসায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি বিদেশে আছেন। স্থানীয় থানা পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাং লালন-পালনে সাবেক এক এমপির আশ্রয়-প্রশ্রয় থাকলেও এলাকার নবনির্বাচিত এমপি খসরু চৌধুরী এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। সম্প্রতি তিনি সংবাদ সম্মেলন করে কিশোর গ্যাং থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। এমনকি নেতাকর্মীদের কেউ কিশোর গ্যাংয়ে জড়িত হলে তাকে ধরিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। পুলিশ জানায়, উত্তরা ছাড়াও মিরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় কিশোর অপরাধ দিন দিন আরও বাড়ছে। বিশেষ করে পল্লবী এলাকায় চুরি-ছিনতাই ছাড়াও কিশোর গ্যাংয়ের হাতে একের পর এক ঘটছে হত্যাকাণ্ড। সর্বশেষ তুচ্ছ ঘটনার জেরে ১৫ মার্চ খুন হন পল্লবী মুড়াপাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফয়সাল। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় কিশোর গ্যাং লিডার গলা কাটা রাব্বি ও টানা আকাশসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এছাড়া বাট্টু নামের অপর এক কিশোর গ্যাং লিডারকে গ্রেফতার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। সূত্র বলছে, মিরপুর ১১ নম্বরে কিশোর গ্যাং গডফাদার হিসাবে পুলিশের তালিকাভুক্ত পল্লবীর যুবলীগ নেতা আড্ডু ওরফে বিহারি আড্ডু। তার প্রধান সহযোগী আলোচিত শাহিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সুমন ওরফে কিলার সুমন। এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং লালন-পালনের অভিযোগ বেশ পুরোনো। বিশেষ করে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান ওরফে কসাই খলিল এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাশেম মোল্লা কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার হিসাবে পরিচিত। এর মধ্যে হত্যা মামলার আসামি কসাই খলিল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি জামিনে বেরিয়ে এলাকায় ফের তৎপরতা শুরু করেছেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নামধারী সন্ত্রাসী মো. বাহাদুর, কিশোর গ্যাং লিডার মো. হাসিবুল হাসান ওরফে বাংলা অনিক,মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল । ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য জানতে চাইলে খলিলুর রহমান মঙ্গলবার রাতে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালায়। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে কেউ তদন্ত করলে এসব অভিযোগের একবিন্দুও সত্যতা পাবে না। এছাড়া অভিযোগের বিষয়ে পল্লবীর যুবলীগ নেতা আড্ডু ওরফে বিহারি আড্ডু বলেন, তিনি একেবারেই নিরীহ লোক। এলাকার কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। সূত্র জানায়, চিড়িয়াখানা রোডে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনে চাঁদাবাজি করে কাউন্সিলর কাশেম মোল্লার অধীন একাধিক কিশোর বাহিনীর সদস্য। এছাড়া পল্লবী থানা ছাত্রলীগ নেতা মিলন ঢালী, ৯১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন, নুর ইসলাম এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিকের বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং লালন-পালনের অভিযোগ পুরোনো। এমন কি তার সহযোগি হিসাবে কাজ করে সবুজ বাংলার এম এম বিপ্লব। সবুজ বাংলার আরেক কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ কারী হোতা সবুজ বাংলার ২ নম্বর লাইনের র্যাবের সোর্স বিহার মিঠু।পল্লবী থানার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান পারভেজ । পারভেজের আরেক ভাই লিটন। জানা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের শেলটারদাতা হিসাবে সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে কাউন্সিলর মানিকসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের নাম আসে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বেকায়দায় পড়েন তারা। এ নিয়ে তাদের কয়েকজন রাজনৈতিক মাঠেও বেশ কোণঠাসা। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাশেম মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসাবে প্রতিদিনই জনতার আদালতে তাকে জবাবদিহি করতে হয়। ফলে চাঁদাবাজি বা কিশোর গ্যাং লালন-পালনের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। তার বিরুদ্ধে মনগড়া এসব অভিযোগ ছড়াচ্ছে স্থানীয় ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান শেখ। মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, পল্লবীর একটি বড় অংশ বিহারি (মুক্তিযুদ্ধকালীন আটকে পড়া পাকিস্তানি) জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত। এছাড়া বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে বস্তি। প্রায় ৩৯টি ক্যাম্পে আটকে পড়া বাসিন্দাদের অনেকেই মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত। এছাড়া কর্মহীন কিশোর-যুবকদের অনেকেই স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে জড়িয়ে পড়ছে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে। এমনকি জমি দখল থেকে শুরু করে কিলিং মিশনেও তাদের কেউ কেউ ভাড়া খাটছে। সূত্র জানায়, দারুস সালাম এলাকায় সক্রিয় কয়েকটি কিশোর গ্যাং এলাকার সব ধরনের সংঘর্ষ এবং মারামারিতে জড়িত। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইসলাম এবং নাবিল খান এদের নেপথ্য মদদদাতা হিসাবে পরিচিত। এছাড়া দারুস সালাম এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন, রূপনগরে স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টেনু এবং কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম শেলটারদাতা ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ জনি। বক্তব্য জানতে চাইলে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ জনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মিথ্যা অভিযোগ। কেন আমরা কিশোর গ্যাং শেলটার দেব। এলাকায় কিছু বখাটে ছেলেপেলে স্কুলকেন্দ্রিক ঘোরাফেরা করে। তাদের বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। বক্তব্য জানার জন্য কল করা হলে ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তোফাজ্জল হোসেন টেনু, স্বেচ্ছাবেক লীগ নেতা ইসলাম ও নাবিল খানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ আবাসিক এলাকা হিসাবে পরিচিত মোহাম্মদপুরেও কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতা ব্যাপক। এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে একাধিক কিশোর গ্রুপের চিকা মারা হয়। এমনকি রাত ১০টার পর এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক চলে যায় কিশোর গ্যাংয়ের দখলে। এ সময় মধ্যরাতে উচ্চ শব্দে হোন্ডা রেস থেকে শুরু করে তাদের নানা তৎপরতা দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম প্রধান শেলটারদাতা স্থানীয় সন্ত্রাসী ইমন ওরফে গার্মেন্ট ইমন। এলাকার প্রায় সব গার্মেন্টের জুট ব্যবসা তার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে জুট না পেলে তার অধীন গ্যাংয়ের সদস্যরা সেখানে অতর্কিত হামলা চালায়। চাঁদ উদ্যানের অফিস থেকে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন ইমন। এছাড়া তিন রাস্তার মোড় এলাকায় তার একাধিক বাহিনী সক্রিয়। কাঁটাসুর এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাং লালন-পালনের অভিযোগ মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। চাঁদ উদ্যান এলাকার কাওসার ওরফে মোল্লা কাওসার তার ডান হাত হিসাবে পরিচিত। এছাড়া রায়েরবাজার এলাকায় একাধিক কিশোর গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে যুবদল নেতা সাকিলের হাতে। তবে সম্প্রতি ডিবির হাতে আটক হন সাকিল। কিন্তু স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতা দেনদরবার করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। স্থানীয় থানা পুলিশ বলছে, মোহাম্মদপুর এলাকার একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন র্যাবের সোর্স হিসাবে পরিচিত ইমন ওরফে অ্যালেক্স ও জ্যাক কল্লু। এছাড়া ধানমন্ডি ২৭ এলাকায় সক্রিয় গ্যাং লিডার সজিব ওরফে ফর্মা সজিব সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন। তবে আরেক গডফাদার আলমগীর ওরফে ফর্মা আলমগীর এখনো আছেন বহাল-তবিয়তে। সূত্র বলছে, রায়েরবাজার কবরস্থান এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ছিনতাই করে আসছে স্থানীয় পাটালী গ্রুপ নামের এক কিশোর গ্যাং। গ্রুপের সদস্য হিসাবে রয়েছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী হাসান ওরফে লেংড়া হাসান, মাইকেল, কাবিলাসহ অন্তত ৭০-৮০ জন। এদের বেশিরভাগই একাধিক মামলার আসামি। পাটালী গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী রানা ওরফে গাল কাটা রানা। এছাড়া মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকায় সক্রিয় কিশোর গ্যাং ডায়মন্ড গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় যুবলীগ র্কর্মী হাসান ও আকাশ। এর সদস্য হিসাবে রয়েছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী সোহাগ, জুয়েল মিলনসহ ১৫-২০ জন। এছাড়া বাঁশবাড়ী এলাকায় ‘লাড়া দে’ নামের কিশোর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা মিম ও নাহিদ। বসিলা ৪০ ফিট এলাকা ‘দে ধাক্কা’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা ফারুক খান ওরফে ওভি। স্থানীয় বখাটে শরিফুল জাকির, ফয়সাল, রুহুল আমিন ও ভাইস্তা রনিসহ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এদের বেশিরভাগই একাধিক মামলার আসামি। এছাড়া মোহাম্মদপুর লাউতলা এলাকায় সক্রিয় ‘ঠোটে ল’ গ্রুপ। একাধিক মামলার আসামি কথিত যুবলীগ নেতা মহিদুল ইসলাম মাহি এর গডফাদার। এছাড়া মেট্রো হাউজিংয়ে সক্রিয় কিশোর গ্যাং ‘লাল গ্রুপ’। এর গডফাদার হলেন স্থানীয় সন্ত্রাসী লাল ওরফে রক্ত লাল। রায়েরবাজার কবরস্থান এলাকায় ‘টক্কর ল’ নামের কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাসেল ওরফে বাত রাসেল এবং ফরহাদ নামের দুই সন্ত্রাসী। সম্প্রতি বেড়িবাঁধ এলাকায় কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নোমান ও তার সহযোগী ব্যাঁকা রাসেল। এছাড়া ঢাকা উদ্যান, নবীনগর হাউজিং ও চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায় সক্রিয় কিশোর গ্যাং গাংচিল বাহিনীর সদস্যরা। সূত্র বলছে, গাংচিল বাহিনীর গডফাদার লম্বু মোশাররফ দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি জেল থেকে বেরিয়ে ফের তৎপরতা শুরু করেছেন এলাকায়। এমনকি যুবলীগের রাজনীতিতেও নামার চেষ্টা করছেন তিনি। স্থানীয় সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত রুহুল আমিন, ভাগনে নাইম, জনি ওরফে রক্তচোষা জনি এবং রবিন ওরফে শুটার রবিন তার অন্যতম সহযোগী। এছাড়া আদাবর এলাকায় সেলিম ওরফে গিয়াস সেলিম, শেখেরটেক পিসি কালচার এলাকায় যুবলীগ নেতা শাহারুক জাহান ওরফে পাপ্পু এবং সুমন ওরফে ওয়ান পিস সুমনের নেতৃত্বে রয়েছে একাধিক কিশোর গ্যাং। স্থানীয় অনেকের ভাষ্য-এলাকার উঠতি বয়সিদের নিয়ে একাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে তোলেন স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজিব। কিন্তু ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে রাজিব গ্রেফতার হলে তার অধীন কয়েকটি গ্রুপ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তবে রাজিব সম্প্রতি কারামুক্ত হলে ফের সক্রিয় হয়েছে কয়েকটি গ্রুপ। এর মধ্যে ‘কব্জি কাটা’ গ্রুপের অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। কিশোর গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে শাসক দলের নেতারা বলছেন, অনেকেই দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে লিপ্ত। এরা আসলে দলের কেউ নয়। এরা প্রকৃত অপরাধী হলে দল কখনো এদের দায় বহন করবে না।