আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অন্তত তিন হাজার টিকিট হাতিয়ে কালোবাজারে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল একটি চক্রের। দেশজুড়ে বিস্তৃত এ চক্রে ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সহজ ডটকমের কর্মীও। তাদের দেওয়া তথ্য ও সহায়তায় স্বাভাবিক সময়েও প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক টিকিট চলে যায় চক্রের হাতে। দীর্ঘ নজরদারির পর গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র ‘ঢালী সিন্ডিকেটের’ হোতা ও সহজ ডটকমে কর্মরত সার্ভার অপারেটরসহ নয়জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। আটকরা হলেন ঢালী সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজান ঢালী (৪৮), সোহেল ঢালী (৩০), সুমন (৩৯), জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), শাহজালাল হোসেন (৪২), রাসেল (২৪), জয়নাল আবেদীন (৪৬), সবুর হাওলাদার (৪০), ও নিউটন বিশ্বাস (৪০)। এদের মধ্যে নিউটন সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল ফোন, একটি এনআইডি, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, কালোবাজারির বিভিন্ন আলামত এবং টিকেট বিক্রির নগদ ১১ হাজার ৪২২ টাকা জব্দ করা হয়। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন সময় অনলাইনে টিকিট কাটার চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হলেও পুরোনো কর্মচারীরা থেকে যাচ্ছেন। নতুন প্রতিষ্ঠানে চুক্তির সময় ৮০ ভাগ পুরনো কর্মী চাকরিতে বহাল রাখার নিয়মের কারণে তারা থেকে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন চাকরি করার কারণে স্টেশনের অন্যান্য মানুষ তথা চক্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থেকে যাচ্ছে। তারাই বিভিন্ন তথ্য দিয়ে চক্রের সদস্যদের সহায়তা করে আসছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা রেলওয়ের অনেকের বিষয়েই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিয়েছি। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেকের বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দারাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দারা কাজ করছেন। ঊর্ধ্বতন কারও টিকিট কালোবাজারিতে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, গোয়েন্দারা যাচাই করে দেখছেন। তিনি আরও বলেন, টিটি, কাউন্টারম্যান, রেলওয়ের সিনিয়র কিছু কর্মকর্তার তথ্য আমরা পেয়েছি। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ সিন্ডিকেটে ঠিক কতজন জড়িত, এর সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, দেশব্যাপী সহজের প্রায় ১০০ অফিস। সবখানে তাদের লোক আছে। টিকিটের যে তথ্য, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা সিন্ডিকেটের সদস্যদের তথ্য দিচ্ছেন, পরে অন্য সদস্যরা টিকিটগুলো কেটে ফেলছেন। স্বাভাবিক দিনেই তারা প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টিকিট কাটছেন। তাই ঈদে তিন হাজার টিকিটের টার্গেট তাদের জন্য বেশি নয়। তিনি বলেন, চক্রের সদস্যদের মধ্যে প্রায় সব টাকাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হতো। গত দুই-তিন মাসে তাদের মধ্যে প্রায় ৯৭ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য আমরা পেয়েছি। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারে, র্যাব সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই র্যাবের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।