গত ১৪ মার্চ ২০২৪ তারিখ দুপুরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের দেওরাজান বালুর চরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ দেখে স্থানীয় লোকেরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাশটি উদ্ধার করে এবং ভিকটিমের ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে ভিকটিমের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। জানা যায় যে, ভিকটিমের নাম সাইফুল ইসলাম, পিতাঃ আব্দুস সামাদ, ঝিনাইদহ। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-১৪/৭৩, তারিখ ১৫ মার্চ ২০২৪। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র্যাব উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নৃশংস এই হত্যাকান্ডের হত্যাকারী মোঃ মাসুক মিয়া (২৯), পিতা-সবুজ মিয়া, দিরাই, সুনামগঞ্জ এবং আল-ইমরান ফয়সাল (৪৪), পিতা-শহীদুল ইসলাম, ধামরাই, ঢাকাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা মূলত আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই/চুরি চক্রের সদস্য। ভিকটিম সাইফুল বিগত ৩/৪ বছর যাবত রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করে আসছিলেন এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল দিয়ে ভাড়ায় চালাতেন। গত ১০-১৫ দিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত মাসুক গ্রেফতারকৃত ফয়সালকে জানায় তার ভাগিনার একটা মোটর সাইকেল দরকার। সেই সুবাদে গ্রেফতারকৃত মাসুক তার ভাগিনার নিকট থেকে ২৫,০০০/- টাকা এনে গ্রেফতারকৃত ফয়সালকে দেয়। কিন্তু গ্রেফতারকৃত ফয়সাল টাকা নেওয়ার পরও মোটরসাইকেল দিতে না পারায় গ্রেফতারকৃত মাসুক চাপ দিতে থাকে। এসময় গ্রেফতারকৃত ফয়সাল মোটরসাইকেল ছিনতাই করে গ্রেফতারকৃত মাসুকের ভাগিনাকে দেয়ার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃতরা কয়েকবার মোটরসাইকেল ছিনতাই করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ঘটনার ০৩ দিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত মাসুক ও ফয়সাল ভিকটিম সাইফুলের মোটরসাইকেল ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে এবং গ্রেফতারকৃতরা গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছিনতাই করার জন্য ছুরি ক্রয় করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত মাসুক ভিকটিম সাইফুলকে জানায় আমার এক সাংবাদিকের তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্র ধারণ এর জন্য নেত্রকোণায় যেতে হবে। পরবর্তীতে গত ১৩ মার্চ ২০২৪ তারিখ বিকেল ৩.০০ ঘটিকায় মিরপুর ১৪ থেকে গ্রেফতারকৃত মাসুক ভিকটিম সাইফুলের সাথে ৩ হাজার টাকা ভাড়া মিটিয়ে নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে গ্রেফতারকৃত ফয়সাল তাদের মোটরসাইকেলে উঠে। তারা ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে তিনজন যাত্রী বহনের কারণে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকালে গ্রেফতারকৃত ফয়সাল নিজেকে দৈনিক শেষ খবর পত্রিকার ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলে যায়। নেত্রকোণা শহরে চলে আসে এবং সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক ০৩.০০ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থলে গ্রেফতারকৃত ফয়সাল পিছন থেকে রাস্তার পাশের পাথর দিয়ে ভিকটিমের মাথায় সজোরে আঘাত করলে ভিকটিম মাটিতে পড়ে যায়। এসময় ভিকটিম মাটিতে পড়ে অচেতন হয়ে গেলে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমকে ছুরি দিয়ে গলাকেট মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিচয় গোপন করতে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমের পরিহিত শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমন্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে মুখমন্ডলে আগুন ধরিয়ে দেয়। গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও ভিকটিম সাইফুলের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতরা মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রেফতারকৃত মাসুকের ভাগ্নের নিকট মোটরসাইকেল রেখে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত মাসুক রাজধানীর মিরপুর ১৪ এলাকায় বসবাস করতো। সে দিনে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো বলে জনা যায়। হত্যাকান্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃত ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো বলে জানা যায়। হত্যাকান্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।