গত ০৭ মার্চ ২০২৪ তারিখ আনুমানিক ২২৪০ ঘটিকায় রাজধানীর উত্তর মুগদা এলাকায় ০১টি পুরাতন মোবাইল ফোন বিক্রয়ের টাকা পরিশোধের দ্বন্দ্বে কবি নজরুল সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূর এবং শামীম হোসেন’কে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াস’কে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরদিন ভিকটিম পিয়াস এর পিতা বাদী হয়ে মুগদা থানায় ০৬ জনকে আসামি করে এবং কয়েকজন অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-০৯, তারিখ ০৮ মার্চ ২০২৪। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র্যাব উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মুগদা এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত অন্যতম প্রধান তিন আসামি ১। মোঃ খালিদ হাসান (১৮), পিতা-মোঃ মোস্তফা কামাল, মাহিগঞ্জ, রংপুর, ২। মোঃ আরিফ হোসেন (২১), পিতা-মোঃ আব্দুল মালেক, ভেদরগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং ৩। মোঃ মেহেদী হাসান মিরাজ (২০), পিতা- সৈয়দ হক, মুগদা, ঢাকাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, উক্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমির উদ্দিন আহমেদ অনিক চোরাই মোবাইল ফোন কেনা-বেচার ব্যবসা করতো। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ অনিকের কাছ থেকে নিহত ভিকটিম পিয়াসের বন্ধু মাহির ৪৩০০ টাকা বাকিতে ০১টি চোরাই মোবাইল ফোন ক্রয় করে। ক্রয়কৃত মোবাইলের টাকা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও মাহির আর্থিক সমস্যার কারণে তা পরিশোধ করতে পারেনি। যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করায় অনিক তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে গত ০৭ মার্চ ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যায় অনিক গ্রেফতারকৃত খালিদ, আরিফ, মিরাজ ও উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপরাপর আসামি অর্নব এবং রাব্বী’কে নিয়ে মোবাইল বিক্রয়ের বাকি টাকা আদায়ের জন্য মাহিরের বাসায় যায়। তারা মাহিরকে বাসায় না পেয়ে মাহিরের মায়ের কাছে মোবাইল বিক্রয়ের পাওনা টাকা দাবী করে এবং অশোভনীয় আচরণ করে। সেখানে মাহিরের মা একদিন পর টাকা পরিশোধ করে দিবে বলে তাদের জানিয়ে দেয়। টাকা পরিশোধের আশ্বাস পেয়ে তারা মাহিরের বাসা থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে মাহির বাড়িতে এসে তার মায়ের কাছে উক্ত ঘটনা জানতে পারে। বিষয়টি মাহির তার বন্ধু ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে জানায়। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, ভিকটিম পিয়াস ও শামীম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অনিকের সাথে উত্তর মুগদা এলাকায় অনিকের আড্ডার পয়েন্টে দেখা করে। এসময় অনিক, পিয়াস এবং শামীমকে তুই তুকারি সম্বোধন করে। পরবর্তীতে একই দিন রাত ১০৩০ ঘটিকায় পিয়াস অনিককে ফোন দিয়ে লিটল এনজেল স্কুলের গলি পুনরায় আসতে বলে। অনিক সেখানে পোঁছালে পিয়াস এবং শামীম অনিকের কাছে কেন সে তাদের তুই তুকারি সম্বোধন করেছিল তার ব্যাখ্যা চায়। পূর্ব থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং এবং সিনিয়র জুনিয়র দন্দ্ব থাকায় তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এসময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অনিক ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য গ্রেফতারকৃতদের ফোন করে সেখানে আসতে বলে। অনিকের ফোন পেয়ে অনিকের বন্ধু গ্রেফতারকৃত খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ মামলার অপর আসামি অর্নব মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং গ্রেফতারকৃত খালিদ পার্শ্ববর্তী একটি গ্যারেজ থেকে বেসবল খেলার স্টিক নিয়ে আসে। এসময় তারা বেসবল খেলার স্টিক ও লাঠি দিয়ে ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে মামলার অপর আসামি রাব্বী পার্শ¦বর্তী একটি দোকান থেকে আচমকা জোর পূর্বক একটি নতুন ধারালো ছুরি নিয়ে ভিকটিম পিয়াসের পিঠের ডান পাশে এবং শামীমের ডান কাধে আঘাত করলে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। ভিকটিমরা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ অন্যান্যরা ভিকটিমদের পুনরায় এলোপাতাড়িভাবে বেসবল খেলার স্টিক ও লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। পিয়াস এবং শামীমের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমদের রক্তাক্ত ও মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে হত্যাকান্ডের ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।