পহেলা মার্চ থেকে ভোজ্য তেল লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলে সে দামে বিক্রি হচ্ছে না। তাই রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ ৭টি রিফাইনারিতে তেলের উৎপাদন ও মজুদ পর্যবেক্ষণের জন্য ভোক্তা অধিকারের টিম গিয়েছে। দাম কমানোর সিদ্ধান্ত সহজে কার্যকর হয় না, অথচ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হয়। চারটি পণ্যের ট্যাক্স কমালেও বাজারে তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বেইলি রোড ট্রাজেডিতে ভোক্তার অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। একজন গ্রাহক রেষ্টুরেন্টে যাবার আগে তার পক্ষে জানা সম্ভব হয় না উক্ত স্থাপণা বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়েছে কি না। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও জরুরি নির্গমন সিড়িসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক আছে কি না। সঠিক সময়ে আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। ভোক্তা—অধিকার সংরক্ষণে আজ প্রয়োজন ভোক্তার সিন্ডিকেট। ভোক্তারা সমন্বিতভাবে কোন দ্রব্য কেনা কমিয়ে দিলে এক সপ্তাহ পরেই তার দাম কমে আসবে, যেমন গরুর মাংস।
আজ ২ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের প্রাক্কালে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দুষ্টচক্রের কারণে ন্যায্য দামে পণ্য কিনতে না পারায় ভোক্তারা কষ্টে আছে। সিন্ডিকেটের কবল থেকে বের হতে পারছে না ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুরসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য। আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে কিনা তা ভাবিয়ে তুলছে ভোক্তাদের। তবে ভ্যাট ট্যাক্স সহনীয় রেখে উন্মুক্ত আমদানি, ডলার সংকট মোকাবেলা, ব্যাংক গুলোকে বাড়তি দামে ডলার বিক্রি না করা, পরিবহণ চাঁদাবাজি বন্ধ করাসহ সর্বোপরি সিন্ডিকেটের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে পারলে ভোক্তারা সঠিক দামে পণ্য কিনতে পারবে। এজন্য ভোক্তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভয়েস রেইজ করতে হবে। কিছু কিছু কর্পোরেট কোম্পানি আছে তারা সবই নিয়ে নিতে চায়। আবার কেউ কেউ আছে তার শুধু খাই খাই করে। এরা নদী খায়, খাল খায়, বিল খায়, ব্যাংক খায়। এইসব খাই খাই ব্যক্তিরা দেশের অর্থ বিদেশেও পাচার করে। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় এই সব কালোবাজারি ও খাই খাই কোম্পানিরা সরকারে চেয়েও শক্তিশালী কি না ? এই সব অসৎ ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করতে হবে। যাতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে কালোবাজারি ও খাই খাই কোম্পানিরা দেশের ক্ষতি করতে না পারে।
জানাব কিরন আরো বলেন, পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখার প্রচেষ্টা থাকলেও রমজান শুরুর আগেই আরেক দফা বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। সরকার বারবার নিত্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখার কথা উল্লেখ করলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন ডলার সংকট, ডলারের বাড়তি দাম, সিন্ডিকেট, উচ্চ শুল্ক ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মূল্য স্বাভাবিক রাখা যাবে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের বেঁধে দেওয়া রেটে ঋণপত্র খুলছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ১১০ টাকা ডলারের দাম নির্ধারণ করলেও এলসির বিপরীতে ডলার প্রতি ১২৪-১২৫ টাকা প্রদান করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার আর একটি কারণ পণ্য পরিবহণ গাড়ি থেকে স্তরে স্তরে চাঁদাবাজি। ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। যা পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আরো বাড়িয়ে দেবে।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জাকির হোসেন, সাংবাদিক উম্মান নাহার আজমী, সাংবাদিক মো: আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক মো: আতিকুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতাটি আয়োজনে সহযোগিতা করেছে জাতীয় ভোক্তা—অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।