টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে হামলা,ভাঙচুর ও কর্মকর্তাদের নাজেহালের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে শহরের ঢাকা রোডের নগরজালফৈ বাইপাস এলাকায় অবস্থিত জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসের সামনে একটি মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জানাগেছে, চলতি বছরের ৯ মার্চ টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে অন্য কোন প্যানেল না থাকায় বালা-মাহতাব পরিষদকে একতরফা ভাবে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। কিন্তু টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.সোবাহান মিয়াসহ তার অনুসারীরা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়নি। ইতোমধ্যে তারা একাধিকবার মানববন্ধ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। এরই ধারাবাহিক কর্মসুচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসুচির আয়োজন করে সোবান অনুসারীরা। কর্মসুচির এক পর্যায়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি মো. বালা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেনসহ বেশ কয়েজন কর্মকর্তা উপস্থিত হলে মানববন্ধনে উত্তেজনা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে বাকবিতন্ড ও ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির সময় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহতাবের উপর সোবাহানের নেতৃত্বে মানববন্ধনে আসা শ্রমিকরা চড়াও হয়। তাকে উদ্ধার করতে গেলে সভাপতি বালা মিয়া ও দপ্তর সম্পাদক মো. শাহিন আলীর পরনের পাঞ্জাবি ছিড়ে ফেলা হয়। এছাড়া উত্তেজিত শ্রমিকেরা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস রুমে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে খুবই উত্তেজনাপুর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোন সময়ে রক্তক্ষয়ী সংর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক মাহতাব জানান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোবাহানের বিরুদ্ধে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ৬১ লাখ টাকা আত্মসাৎকৃত টাকার বিষয়ে মামলা হয়েছে। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) তদন্তে প্রমানিত হয়েছে। উক্ত টাকা তদন্ত রির্পোট ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আজকের এ মানববন্ধন ও হামলা। আমরা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. বালা মিয়া জানান, গত ৩৫ বছর ধরে ট্রাক শ্রমিক রাজনীতির সাথে জড়িত। সাধারণ শ্রমিকের ভোটেই আমি বার-বার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। এবং সুনামের সহিত সংগঠন পরিচালনা করে আসছি। গত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোবাহানের অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাইে নির্বাচিত হয়েছি। সামান্য কিছু বাহামভুক্ত শ্রমিক ও বহিরাগত লোক নিয়ে আজকের এই হামলা কাপুরুষোচিত ও বর্বরোচিত। আমরা এ হামলা ও ভাঙচুরের বিরুদ্ধে সংগঠনের কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত ও উপদেষ্টাদের পরামর্শক্রমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। অভিযুক্ত ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সোবাহান মিয়া জানান, গঠনতন্ত্রের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বর্তমান কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানি না। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎের ঘটনাটি সত্য নয়। আমি যদি টাকা আত্বসাৎ করে থাকি তাহলে বর্তমান কমিটির অনেকেই ওই আত্ব সাৎএর টাকার সাথে জড়িত রয়েছে। তিনি আরো জানান, অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় সাধারণ শ্রমিকদের সাথে নিয়ে এই কমিটিকে প্রতিহত করা হবে। টাঙ্গাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া(পিপিএম) জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখনো পর্যন্ত হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ কোন প্রতিদ্বন্দিতা না থাকায় বালা-মাহতাব পুরো পরিষদ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। নব-নির্বাচিত সভাপতি হন মো. বালা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবু বক্কর সিদ্দিক মাহতাব।