বান্দরবানের থানচি উপজেলার বড় মদকে ২০১৯-২১ অর্থ বছরে বমজেলা পরিষদের তত্বাবধানে ২কোটি টাকা ব্যয়ে সাঙ্গু নদীর উপর নির্মিত হয় দৃষ্টি নন্দন একটি ঝুলন্ত সেতু। এটি নির্মিত হওয়ায় মিয়ানমার সীমন্তবর্তী সাঙ্গু নদীর দুই পাড়ের প্রায় ৫ হাজার মানুষের মধ্যে তৈরি হয় সেতু মেলবন্ধন। এটি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাই নয়, পর্যটকদের জন্যও ছিল আকর্ষনীয় একটি সেতু। এ সেতুটি নির্মাণের ফলে বড় মদক এলাকার সকলেই প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় মন্ত্রীর গুনকীর্তণ শুরু করে। কিন্তু এত গুনকীর্তণের পর মাত্র ২বছর পার হতে না হতেই ২০২৩সালের আগষ্ট মাসে হওয়া প্রথম বন্যার পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে এটি। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও কৌশলগত ত্রুটির কারণেই এটি ভেঙ্গেছে বলে দাবী করছে স্থানীয়রা। আর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে পুরো এলাকায়। পার্বত্য জেলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০১৯-২১ এ দুই অর্থবছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের ১কোটি ৯৯লক্ষ টাকা ব্যয়ে থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নের বড় মদকে সাঙ্গু নদীর উপর নির্মাণ করা হয় ৮০মিটার দৈর্ঘ্য ও ১.৮মিটার প্রস্থের দৃষ্টি নন্দন এ ঝুলন্ত সেতুটি। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করে। কাজটি বাস্তবায়ণ করে মি:ইউটি মং এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের নামে ঠিকাদার মংউয়েনু মারমা ও থানচির রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি। স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী থানচির দূর্গম রেমাক্রী ইউনিয়নের বড় মদক এলাকায় সাঙ্গু নদীর উপর নির্মাণ করেছে দৃষ্টি নন্দন ঝুলন্ত সেতুটি। সাঙ্গু নদীতে বর্ষাকালে পানি যখন বেড়ে যায় তখন দুই পারের মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনা। এ সেতুটি নির্মাণের ফলে বর্ষাকালেও দুই পাড়ের প্রায় ৫হাজার মানুষের মধ্যে তৈরি হয় সেতুর মেলবন্ধন। তাদের দাবি, সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল বর্ষাকালে যখন পানি বেড়ে যায় তখন যেন উভয় পাড়ের মানুষ যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। কিন্তু স্থানীয় নদীর লোকাল বালু, বালুতে সিমেন্টের পরিমান কম মিশ্রন, নদী থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা (অপরিপক্ক) পাথর এবং নিম্নমানের রড ব্যবহারের কারণে প্রথম পানির চাপেই সেতুটির অধিকাংশ পিলারগুলোর সিমেন্টের আস্তর সরে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে। এতে সেতুটিও বেঁকে গেছে কয়েক জায়গায়। তারা জানায়, বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর উপর ঝুলন্ত সেতুটি ছাড়াও থানচি সদরে ১টি, থানচির বলিপাড়ায় ১টি, রুমা সদরে ১টি, রোয়াংছড়ির বেতছড়ায় ১টি ও বান্দরবান সদরে ৩টি সেতু রয়েছে। এ বন্যায় কোন সেতুর ক্ষতি হয়নি। তবে এ সেতুটি কেন ভেঙ্গে গেল তা খতিয়ে দেখারও দাবি জানান তারা। থানচির স্থানীয় মংশৈনু মারমা জানান, মাত্র বছর দুয়েক আগে বড় মদকে সেতুটি করার পর স্থানীয়রা অনেক খুশি হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পার্বত্য মন্ত্রী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ আওয়ামীলীগের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ২বছর না যেতেই ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা সকলেই হতাশ। তাদের দাবি, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করায় পানির চাপ সহ্য করতে না পেরে সিমেন্টের আস্তর সরে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে পিলার ও বেঁকে গেছে সেতুর উপরের অংশ। বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান তিনি। থানচির রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি বলেন, এবারের বন্যায় পানির সাথে বড় বড় গাছ আর বাঁশ ভেসে এসে সেতুতে আটকে যায়। এগুলোর ভার সইতে না পেরেই সেতুটি বেঁকে গেছে। তবে পিলার ভাঙ্গার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। সেতুটি ভাঙ্গার মূল কারণ হিসেবে বন্যাকে দায়ী করে ঠিকাদার মংউয়েনু মারমা বলেন, কাজটি করার সময় কোন অনিয়ম করা হয়নি। এবার বেশি বন্যা হয়েছে। তাই পানির চাপ সইতে না পেরে সেতুটি ভেঙ্গে গেছে। সেতুতে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি জানিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জিয়াউর রহমান বলেন, থানচি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে এখনো সেতুটি দেখতে যেতে পারিনি। তবে এবার যে বন্যা হয়েছে তা অতীতে দেখা যায়নি। মূলত বন্যার পানি পেশার ও ভাসমান নানা ধরণের গাছের ভার বহন করতে না পেরেই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে এটি সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি বরাদ্দ পেলে সেতুটি সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো। এদিকে সাঙ্গু নদীর উপর এতগুলো সেতু থাকার পরও শুধুমাত্র এ সেতুটি কেন ভাঙ্গলো এর মূল কারণগুলো তদন্ত করে বের করার জোর দাবি উঠেছে সচেতন মহলে।