যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে পরদিনই একটি সুপার শপ উদ্বোধন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপের সময় স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি চিন্তা না করেই বিদেশ থেকে ফিরে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি লঙ্ঘন করায় আলোচনা তৈরি হয়। অথচ এখন স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে সেই সাকিবেরই সোমবার নেয়া হয়নি ফিটনেস টেস্ট। ২০ জনের গ্রুপে সোমবার সকাল ১০টায় প্রথম ফিটনেস টেস্ট দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ফিটনেস ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদার দাবি করেছেন, ১৯ জনের সঙ্গে সাকিবের ফিটনেস টেস্ট নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সাকিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে কোভিড-১৯ টেস্ট করিয়ে নেগেটিভ হলেও গ্রুপের বাকি ১৯ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। তাই তুষার জানিয়েছেন, বুধবার আলাদাভাবে সাকিবের ফিটনেস টেস্ট নেয়া হবে। তবে ক্রিকেটারদের বিপ টেস্টের প্রথমদিন সাকিব আগেভাগেই মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছিলেন। টানা ৩৭৬ দিন পর ‘হোম অব ক্রিকেটে’ ফিরে সতীর্থদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও হাল্কা ড্রিল করেছেন সাকিব।
জুয়াড়িদের কাছ থেকে ফিক্সিং প্রস্তাব পেয়েছেন একাধিকবার, কিন্তু বিষয়টি গোপন করেন সাকিব। সেই অপরাধে ১ বছরের জন্য সবধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি। ২৯ অক্টোবর থেকে যে কোন পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার জন্য উন্মুক্ত হয়েছেন। এখন সাকিবের ক্রিকেটে ফেরার পালা। গত বছর ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল তাকে। সেদিন দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অপরাধ স্বীকার করে নিজের অনুতপ্ত হওয়া এবং ভক্ত-সমর্থকদের জন্য আবার ফেরার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন। মাঝে আর ফেরেননি সেই মাঠে। ফিরলেন ৯ নবেম্বর সকালে। সবমিলিয়ে ৩৭৬ দিন পর। আসন্ন বঙ্গবন্ধু টি২০ লীগ দিয়ে আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরবেন তিনি। তবে এর আগে ফিটনেস টেস্ট দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। বিসিবি আগেই ১১৩ ক্রিকেটারের তালিকা দিয়েছিল সে জন্য। ২০ জন করে ৪টি গ্রুপে ৮০ জনের ফিটনেস টেস্ট ছিল সোমবার। প্রথম ধাপ সকাল ১০টায় ২০ জনের গ্রুপে প্রথম নামটি ছিল সাকিবের। নির্দিষ্ট সময়ের আধাঘণ্টা আগে মিরপুরে এসে সতীর্থদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়েছেন, হাল্কা অনুশীলন করেছেন। কিন্তু ফিটনেস টেস্ট দেননি। এ বিষয়ে বিসিবির ফিটনেস ট্রেনার তুষার কান্তি বলেন, ‘সাকিবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ। যাদের সঙ্গে সাকিবের বিপ টেস্ট হওয়ার কথা, তাদের কারও কোভিড পরীক্ষা করানো হয়নি। জনসমাগমে ফিটনেস টেস্ট করালে ওরজন্য কিছুটা ঝুঁকি থাকে।’
তুষারের এই বক্তব্যের পরই আলোচনায় এসেছে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরে শুক্রবারই সাকিবের সুপার শপ উদ্বোধন করার ঘটনাটি। অথচ তার মাত্র ৭২ ঘণ্টা পর দূরত্ব বজায় রেখে ফিটনেস টেস্টটাই তারজন্য হয়ে গেল অনিরাপদ। অবশ্য বিসিবি কোন ঝুঁকি নিতে চায় না। সাকিব যা করেছেন তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার ছিল- সেটি আগেই বিসিবি বলেছে। তাছাড়া গত সেপ্টেম্বরে বিকেএসপিতে অনুশীলনের পর এক মাসেরও বেশি ফিটনেস অনুশীলনের বাইরে সাকিব। ফলে এই গ্যাপে ফিটনেসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে জন্যই তাকে ফিট করে তোলার জন্যও কিছুটা সময় দেয়া দরকার বলে জানিয়েছেন তুষার কান্তি, ‘সে দীর্ঘদিন পর ফিরেছে। ফিজিও-ট্রেনাররা তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। এ জন্যও একটু সময় লাগবে।’ ফিটনেস টেস্টের জন্য বিপ টেস্টে ১১ পেতে হবে ক্রিকেটারদের, তবেই টি২০ লীগের প্লেয়ার্স ড্রাফটে নাম উঠবে। তাই সাকিবকে কিছুটা সময় দেয়া হলো। বুধবার এককভাবে তার বিপ টেস্ট হতে পারে বলে জানিয়েছেন তুষার কান্তি।