করোনা মহামারির আঘাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পর্যটন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দেশের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোটেল শিল্পখাত। এই খাতটিকে বাঁচাতে ছয় দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা)।
২২ জুলাই বুধবার গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিহা নেতৃবৃন্দ ধ্বংসের মুখে পড়ে যাওয়া এ খাতের সাথে জড়িত তিন লাখের বেশি মানুষ ও তার পরিজনদের বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য রাখেন বিহা সভাপতি এইচএম হাকিম আলি। এরপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিহা ডিজিস্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির কো চেয়ারম্যান খালেদ উর রহমান সানি।
খালেদ উর রহমান সানি বলেন, জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৪.৪ শতাংশ যা অতি দ্রুত দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু করোনার আঘাতে এ খাতে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলত্র থাকলে চলতি বছরেই বাংলাদেশের হোটেলগুলোর ক্ষতি ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।বেশিরভাগ হোটেলের অতিথি সংখ্যা ২-৩ শতাংশে নেমে এসেছে,যা স্মরণকালে সর্বনিম্ন। অনেক হোটেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।এ অবস্থায় হোটেলগুলোর পক্ষে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়।প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে, বাংলাদেশে করোনাকালে বেকার হয়ে পড়ার হুমকির মুখে রয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার বেশি হোটেল শ্রমিক ও কর্মচারী।
খালেদ উর রহমান সানি আরো বলেন, দুঃসহ এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে শেষ ভরসা হিসেবে আমরা “এক্সক্লুসিভ প্যাকেজ ফর হসপিটালিটি ইন্ডাস্টি ও এই খাত বাঁচাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় ৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন আবাসিক হোটেল ও অন্যান্য হোটেল এবং রিসোর্টের বিপরিতে বিদ্যমান ঋণের লভ্যাংশ,সুদ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ এবং চলমান কিস্তি আগামী বছরের জুন হতে চালুকরণ এবং কিস্তি চালুকরণের আগ পর্যন্ত সমস্ত লভ্যাংশ,সুদ স্থির করা।
২. কোভিড ১৯ প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হোটেল এবং রিসোর্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাজেজের আওতায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ওপর অর্পিত ৯ শতাংশ লভ্যাংশ, সুদ হারে পরিশোধের সময়সীমা ০৩ বছর মেয়াদী করা এবং ঋণ বিতারনের তারিখ হতে এক বছর গ্রেস পিরিয়ড রেখে পরবর্তী দুই বছরে পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ।
৩. কোভিড ১৯ মহামারির কারনে সরকারি আদেশ অনুযায়ী লকডাউনে ছুটিতে যাওয়া হোটেলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সরকার নিজস্ব তহবিল হতে ৫০০ কোটি টাকা তহবিল মাসিক বেতন ভিত্তিতে তাদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যেমে প্রদান করা।
৪. আবাসিক হোটেলগুলোর মার্চ হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সমস্ত ইউটিলিটি বিল ইলেক্ট্রিক,ওয়াসা এবং গ্যাস বিল মওকুফ করা।
৫. সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার আওতাধীন আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের হোল্ডিং ট্যাক্স ২০২০-২১ পর্যন্ত মওকুফ করা।
৬. আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে কর কর্তন মওকুফ করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিহা সভাপতি হোটেল আগ্রাবাদের সিইও এইচ এম হাকিম আলি, সেনা ডেভলেপমেন্ট লিমিটেডের আওতাধীন র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন ও র্যাডিসন ব্লু চট্রগ্রাম বে ভিউর এমডি লে. জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকার এক্সকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (ফিন্যান্স), আসিফ আহমেদ, লং বিচ হোটেলের এমডি আবুল কালাম আজাদ, গোল্ডেন টিউলিপ দ্যা গ্রান্ডমার্ক ঢাকার এমডি খালেদুর রহমান সানি, লেকশোর হোটেল গুলশানের এমডি কাজি তারেক শামস, আমারি ঢাকার এমডি আশোক কেজরিওয়াল,হোটেল লা ভিঞ্চিত এমডি এটিএম সাইদুর আলম, রেঁনেসা ঢাকা গুলশান হোটেলের জিএম আজিম শাহ, ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট লিমিটেডের আওতাধীন দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা এবং হানসার সিইও সাখাওয়াত হোসেন, দ্য ওয়ে ঢাকার এমডি আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ এবং বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্ল্যাস মায়ার সিইও রাশেদুল হোসেন চৌধুরী।