হাটহাজারীতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পবিত্র শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব শুক্রবার থেকে শুরু হবে। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তথা প্রবারনা পূর্ণিমার পরদিন থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত এক মাস ব্যাপী এই দানানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় থাকে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা মহাকারুনিক গৌতমবুদ্ধ তাঁর জীবতকালে বর্ষা মৌসুমে বৌদ্ধ ধর্মগুরু তথা ভিক্ষু সংঘের পিন্ড চারন কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। কারন বর্ষার সময় বৃষ্টিপাতে মাটি কাদা হয়ে পড়ে। এতে করে ভিক্ষুসংঘদের পথচলা কস্টকর এমনকি পা পিছলে পরে আঘাত পাওয়ার আশংকা থাকে। তাই ভিক্ষুসংঘ এই সময় বৌদ্ধ মন্দির / বিহারে অবস্থান করে ধ্যান সাধনা করা সমীচীন মনে করেন গৌতম বুদ্ধ। বর্ষা মৌসুমে মন্দির এক প্রকার নিরিবিলি থাকে বিধায় এই সময়টি ধ্যান সাধনার অনুকূল সময় বলে তিনি( বুদ্ধ) বিশ্বাসী ছিলেন। তাই এই তিন মাস মন্দিরে অবস্থান করে ভিক্ষুসংঘ ধ্যান সাধনা করে মনের কালিমা বিদূরিত করে আত্মসুখ, আত্মমুক্তির মাধ্যম পরকালে নির্বান সুখে সুখী হতে গৌতম বুদ্ধ এই প্রস্তাবনা তথা নির্দেশনা প্রদান করেন। বার্ষাকালীন তিন মাস মন্দিরে অবস্থানের মাধ্যমে ধ্যান সাধনার পর লব্ধ জ্ঞান উপাসক/ উপাসিকা, দায়ক/ দায়িকাদের মাধ্যে দেশনা ও ধর্মবিনয়ের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কঠিন চীবর দানের প্রবর্তন করেছিলেন। আশ্বিনী পূর্ণিম্ থেকে কার্ত্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত এক মাস যেসব বৌদ্ধ বিহার / মন্দিরে ভিক্ষু সংঘ বর্ষাব্রত অধিস্ঠান করে ধ্যান সাধনা করে থাকে একমাত্র সেই বিহার / মন্দিরেই শুধু দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব করা যায়। এই দান করতে মনকে স্হির করতে হয়, হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করতে হয়,চিত্তকে সংযত করতে হয়, মনকে একাগ্র করতে হয়, মনে বিনয় ভাব পোষন করতে হয়। সর্বপরি এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিহারে অবস্থান কারি ভিক্ষুসংঘকে এক বছরে জন্য তাঁদের পরিধেয় কাপড় দান করতে হয়। বুদ্ধের সময়ে তুলা থেকে সুতা কেটে, সেই সুতা দিয়ে কাপড় তৈরি করে, কাপড় লাল রং দিয়ে ভিক্ষুদের পরিধানের উপযোগী করে তৈরি করে সেলাই করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এইসব কর্মকাণ্ড শেষ করে দান করা বিনয সম্মত নিয়ম ছিল। এই কর্মকাণ্ডের কারনে এই দানকে কঠিন চীবর দান হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাটহাজারী অঞ্চলে এই চীবর দানানুষ্ঠান আজ শুক্রবার রুদ্রপুর ধর্মরত্ন বিহার প্রথম চীবর দান অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার মীরেরখীল – চন্দ্রপুর বেনুবন বিহারে, ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পশ্চিম ধলই উদালিয়া শান্তি নিকেতর বিহারে চীবর দান, ২৫ অক্টোবর শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিশ্ব শান্তি প্যাগোডায় চীবর দান অনুষ্ঠিত হবে, ২৬ অক্টোবর শনিবার জোবরা সুগত বিহারে চীবর দানোৎসব, ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার গুমানমর্দ্দন শান্তি বিহারে, ১ নভেম্বর শুক্রবার মির্জাপুর শান্তিধাম বিহারে, ২ নভেম্বর শনিবার মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহারে, ৮ নভেম্বর শুক্রবার গুমানমর্দ্দন ধর্মচক্র বিহারে চীবর দানানুষ্ঠান, ৯ নভেম্বর শনিবার বালুখালী জগৎজ্যোতি বিহারে ও ১৫ নভেম্বর শুক্রবার গুমানমর্দ্দন সার্বজনীন নালন্দা বিহার এই উপজেলার আওতাধীন বৌদ্ধ বিহারে সর্বশেষ দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উপজেলায় চীবর দানের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। চীবর দান উপলক্ষে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার/ মন্দিরে পূথক পূথক কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।