বগুড়া জেলার মাঠজুড়ে সবুজে ঘেরা ধানের ক্ষেত, যে দিকেই চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। ফসলের মাঠ যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নজর কাড়ছে আমন ধান। কৃষকের আগামীর সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে ধানক্ষেতের মাঝে। হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজপাতা ও সোনালী ধানের শীষ আর কিছু দিনের মধ্যে আমন ধান পাকা শুরু করবে। সবুজ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। আর কয়েক দিনের মধ্যেই সকল জমিতে সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা। পাশাপাশি কৃষকের মুখে ফুটে উঠবে হাসি। গত মঙ্গলবার জেলার নন্দীগ্রাম, কাহালু,শাজাহানপুর, সহ কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহর এই চিত্র। প্রতিটি খেতে ধানের শীষ উঁকি দিচ্ছে। ধনের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ১২টি উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৮২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি। চাষাবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। সাম্প্রতিক বন্যায় যমুনা তীরবর্তী এই জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় গেল বছর অল্প পরিমাণ জমির ক্ষতি হলেও এবার কোনো ক্ষয়ক্ষতি নেই। জেলায় এ বছর ধানে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা যায়। এ জেলায় জুলাই মাসের মধ্যবর্তী থেকে কৃষকরা জমিতে এ ধান লাগিয়েছেন। অনেকে আগাম হিসেবে এর আগেও চাষাবাদ শুরু করেন। রোপণের সময়ের ওপরই ধান বা যে কোনো ফসলের বেড়ে উঠা নির্ভর করে। এ জেলায় কৃষকরা ব্রি ধান- ৪৯, ৫১, ৭৫, রঞ্জিত, স্বর্ণা জাতের ধান বেশি চাষ করেছেন । এসব জাতের ধানের ফলনও ভাল হয় বলে জানা যায়। এতে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বেশ লাভবান হতে পারবেন কৃষকেরা, সবমিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ জেলার কৃষকরা। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শিবগঞ্জ, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, আদমদীঘি দুপচাঁচিয়া উপজেলা সবচেয়ে বেশি আমন আবাদ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমান ফসল উৎপাদন করে অত্র অঞ্চলের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেও ৭০/৭৫ভাগ ধান দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে। জেলার বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপ করলে তারা দৈনিক নবচেতনা কে জানান, এবার আমন ধান চাষে এখন পর্যন্ত পত্তন বাদে প্রতিবিঘায় খরচ হয়েছে সাড়ে সাত হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়েও লাভের আশায়, বুক ভরা আশা নিয়ে দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি কৃষকরা। যদিও এবারের পোকামাকড়ের আক্রমন কম, আমন ধান গত বছরের চেয়ে এবার ভাল হয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না আসে তবে এবার আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে চাষাবাদ করা জমিতে রোপণকাল অনুযায়ী কখনও নিড়ানিও দিতে হচ্ছে। আবার প্রয়োগ করতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক। পানির অভাব দেখা দিলে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। বিগত রোপা আমনে উৎপাদিত ধানের ভাল দাম পাওয়ায় মনে অনেকটা আনন্দ নিয়েই কষ্টকর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান, দৈনিক নবচেতনা কে জানান,জেলায় চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ১২টি উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৮২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমি। চাষাবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। জেলায় চলতি মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন। জেলার কিছু এলাকায় আগাম লাগানো ধান গাছে এরই মধ্যে পাকও ধরেছে। কিছু কৃষক মোট চাষাবাদের প্রায় ১০ হেক্টর জমির নতুন ধান ঘরেও উঠিয়েছেন।