
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির নানা হাঁকডাক আওয়াজ খালি কলসি বেশি বাজার মতো।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে ধস নামানোর বিজয়ের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছেন। বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর বলেছিলো, সরকার বড়জোর তিন মাস টিকবে। আমরা পাঁচ বছর সরকার পরিচালনা করেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বলেছিলো এই সরকারও তারা টেনে ফেলে দেবে। এখন বিএনপিই রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে। অর্থাৎ এখন মির্জা ফখরুল সাহেব ও তাদের নেতারা যে সমস্ত কথা বলছেন সেটি হচ্ছে খালি কলসি বেশি বাজার মতো।’
বুধবার বিকেলে মিরপুর ১০ গোলচত্বর সংলগ্ন রোডে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
হাছান বলেন, ‘আজকে আমি একটু আগে অনলাইনে দেখলাম বিএনপি নেতারা বলেছেন, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ ঘেরাও করে সরকারের পতন ঘটানো হবে। আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা বিএনপিকে ঘেরাও করবো। ওরা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় আমরা বিএনপিকে ঘেরাও করবো। তাদের ঘেরাও করে গণপিটুনি দেবো না, তাদের শিক্ষা দেবো আমরা। যদি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায় তাহলে তাদেরকে ঘেরাও করা হবে।’
‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে বিদেশি সরকারগুলোর কিছু হয়নি’
ভিসানীতি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বলেছেন যে, ভিসা নীতিতে তাদের আন্দোলন বেগবান হয়েছে। তিনি জানেন যে, ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে যে, যারা নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ হবে। আর যাদের ওপর ইতিমধ্যেই ভিসানীতি কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে বিরোধী দলের নেতারাও আছে সেটি ফখরুল সাহেব জানেন না। জানলে এ কথা বলতেন না।’
‘আমাদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো এবং আমাদের সাথে এই সম্পর্ক উত্তরোত্তর ঘনিষ্ঠ হচ্ছে’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, জো বাইডেন দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সেলফি তুলেছেন এবং নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীকে নৈশভোগের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জো বাইডেন সস্ত্রীক প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিউ ইয়র্কে ছবি তুলেছেন, ছবিই কথা বলে, আমরা ভিসা নীতি নিয়ে মাথা ঘামাই না।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাকে ভিসা দিলো, কাকে দিলো না, এটি তাদের ব্যাপার। এই ভিসানীতি বহু আগে থেকেই তাদের আছে। তাদের ভিসানীতিতে যেটি বলা আছে সেই অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে তারা পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি নতুন কোনো কিছু নয়। সুতরাং এই ভিসা নীতি একটি বিচ্ছিন্ন বিষয়। আমাদের সাথে মার্কিনা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু দেশের ওপর ভিসানীতি কার্যকর করেছে। তারা নাইজেরিয়ার ওপর ভিসানীতি কার্যকর করেছে সরকারের কিছু হয় নাই, কম্বোডিয়ার ওপর কার্যকর করেছে সরকারের কিছু হয় নাই। উগান্ডার ওপরও তারা ভিসানীতি কার্যকর করেছে সরকারের কিছু হয় নাই। কিউবার ওপর ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ভিসানীতি কার্যকর ছিলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১শ’ মাইল দূরে কিউবার কিছু হয় নাই। সুতরাং এই ভিসা নীতি নিয়ে এতো কিছু মাতামাতি করার কোনো কারণ নাই।’
‘তাই বিএনপির এই আন্দোলনের ধপধপানি হচ্ছে চেরাগ নিভে যাওয়ার আগে ধপধপানির মতো’, বলেন মন্ত্রী।
নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে হাছান বলেন, ‘এই দেশ বঙ্গবন্ধুর দেশ। এই দেশের নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা কোনো রক্তচক্ষুকে পরোয়া করে না। আমি নেতাকর্মীদের বলবো, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, আওয়ামী লীগ লড়াই সংগ্রামের দল। আমরা ২১ বছর বুকে পাথর বেঁধে রেখেছিলাম। আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষের সংগ্রামের কাফেলাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সুতরাং আওয়ামী লীগ কোনো কিছুকে পরোয়া করে না। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে আবার ধস নামানোর বিজয়ের মাধ্যমে আমরা সরকার গঠন করবে।’
‘আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো নির্বাচনে আসুন, নির্বাচনে যদি না আসেন তাহলে আপনাদের অনেক নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে’ বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে দলীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন মায়া, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশন ভবনে ‘তথ্যের অবাধ প্রবাহে ইন্টারনেটের গুরুত্ব’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে এবং তার সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাস করে। অবাধ তথ্য প্রবাহ মানুষের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে, গণতন্ত্র, বহুমাত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংহত হয়। সে জন্য আমরা তথ্য অধিকার আইন পাস করেছি এবং আজকে সত্যিকার অর্থে দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে।’
সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে তথ্য অধিকার প্রয়োগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সময়ে সময়ে বাড়ানো হয়। আমি সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাবো যারা এই সিন্ডিকেট করে তাদের সম্পর্কে আপনারা জানেন। পাইকারি বিক্রেতা কত টাকা দিয়ে পণ্য কিনেছেন, তার উৎপাদন খরচ কত এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কত টাকায় বিক্রি করছেন এবং সেখান থেকে তারা এবং খুচরা বিক্রেতারা কত শতাংশ মুনাফা অর্জন করছেন। অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় সময়ে সময়ে দ্রব্যমূল্য অকারণে বৃদ্ধি পায়। এখানে যদি স্বচ্ছতা আসে, এ বিষয়গুলো আরো ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে আসে তাহলে কেউ এটি করতে পারবে না।’
এনজিও বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক এনজিও সময়ে সময়ে জাতিকে জ্ঞান দেয়। এই এনজিওগুলো কোথায় টাকা পায় তারা কত টাকা কিভাবে কোন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে, ট্যাক্স দেয় কি না সেটিও জানা প্রয়োজন। শুধুমাত্র সরকারি দপ্তরে গিয়ে তথ্য পাওয়ার জন্য দেন-দরবার বা ভিন্ন উপায় অবলম্বন করা এবং শুধুমাত্র সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সেগুলোকে গণমাধ্যমে আনা সমীচীন নয়।’
নাগরিক সমাজের প্রসঙ্গ টেনে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিস্তৃত গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নাগরিক সমাজ একটু বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু নাগরিক সমাজের নাম করে যারা বিভিন্ন সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করছে, জাতির স্বার্থ রক্ষা না কি যাদের কাছ থেকে অর্থ পাচ্ছে, অনুদান পাচ্ছে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, সেই তথ্যও জানা প্রয়োজন। সুধিমন্ডলী ও সাংবাদিকদের অনুরোধ করবো সে দিকে দৃষ্টিপাত করার জন্য।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত এক দশকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে পৃথিবীর পুরো ক্যানভাসটাই বদলে গেছে, মানুষের অভ্যাসও বদলে গেছে। দেশে ৮ কোটির বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। এবং এই মাধ্যম আমাদের যোগাযোগের অবাধ সুযোগ যেমন করে দিয়েছে, একই সাথে রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা, সমাজে অস্থিতিশীলতা, গুজব রটানো, ভুল সংবাদ মিথ্যা সংবাদ, উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ ছড়ানোর বড় প্লাটফর্ম তৈরি করেছে।’
হাছান বলেন, ‘গত এশিয়া মিডিয়া সামিটে মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজে অস্থিরতা মোকাবিলা। বছরখানেক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সার্ভেতে দেখা গেছে ৭৫ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করে যে সমাজে যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়, সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা হয়, এবং তৎপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র দুর্বল হয়। এই প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি এই ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিপাত করা দরকার। কারণ এ দেশেও পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে নরবলি দেওয়াসহ নানা ধরণের গুজব, এরপর ছেলে ধরা গুজব ছড়ানোর পর গণপিটুনিতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তথ্য কমিশন এই ক্ষেত্রে কি করতে পারে, সেটি নিয়েও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’
প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বক্তব্য রাখেন। আলোচনায় অংশ নেন তথ্য কমিশনার শহিদুল আলম ঝিনুক এবং মাসুদা ভাট্টি। সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ, সাবেক তথ্য কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার এবং মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ এবং তথ্য অধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় যোগ দেন।
প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য অধিকার দিবস পালনের ধারাবাহিকতায় এ দিনের সভায় বক্তারা বলেন, জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালের প্রথম অধিবেশনে ২৯ মার্চ তথ্য অধিকার আইন পাশ হওয়ার পর থেকে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে এ আইনের আওতায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯শ’ ১৮টি আবেদন জমা পড়েছে এবং এর ৯৬.৭৩ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে। আর তথ্য কমিশনে এ পর্যন্ত দায়ের করা ৫ হাজার ৩শ ৬০টি অভিযোগের মধ্যে ৫ হাজার ২শ’ ৭১টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০০৯ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারি ছিলো ৬০ লাখ যা এখন প্রায় ১২ কোটির কাছাকাছি এবং দেশে ব্যবহৃত মোবাইল সিমের সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি।