প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামতকৃত সড়কটি ৩বছরও যায়নি। মেরামত ও সংস্কারের নামে এ সড়কটি বারবার লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছে। পাথরের কার্পেটিং সড়কে এইচবিবি (ইটের সোলিং) নামে প্রায় ৪০লাখ ৬১হাজার টাকায় এবার কেনা হয়েছে জনদুর্ভোগ। ফলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কটি দ্বিগুণ জনভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব জানান, রাস্তাটি মেরামতের জন্য আবারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সড়কটি মেরামতের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি’ও উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া করা হবে। তিনি আরও জানান, রাস্তার দু’পাশে পুকুর থাকায় পানি নিষ্কারণ হচ্ছে না। রাস্তায় দীর্ঘদিনস পানি থাকায় কার্পেটিং নষ্ট হচ্ছে ও রাস্তার পাড় ধসে যাচ্ছে। এছাড়াও এ সড়কে ১০ মেট্টিকটন পর্যন্ত বহনযোগ্য অথচ ২০-৪০টনের বালি ও পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল করে। ফলে রাস্তাটি মেরামত ও নির্মাণের পর দ্রুত ভেঙ্গে যাচ্ছে। সরজমিনে দেখা যায়, গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কের নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ইটের সোলিং করা হয়। উত্তরবাজার গ্রামীণ ব্যাংক অফিসের সন্নিকটেও ইটের সোলিং করা হয়েছে। দু’স্থানে ইটের সোলিং করায় মূলসড়কের কার্পেটিংয়ের চেয়ে প্রায় ৬ থেকে ৮ইঞ্চি উঁচু হয় সোলিং। ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পুরো রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভালুকা ব্রিজ থেকে নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ৬৮টি খানা-খন্দকের কারণে মুলত যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনুরূপভাবে শ্যামগঞ্জ পর্যন্ত ১১টি স্থানে ইটের সোলিংয়ের নামে পুরো রাস্তাটিকে আরও ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। এসব সোলিংয়ে উঠার সময় ও নামতেও যানবাহনের ব্রেক চাপতে হয়। এ প্রসঙ্গে ষোলগাই গ্রামের নুরুল আমিন জানান, এটা সোলিংয়ের সড়ক না। যেসড়কে পাথর ঠিকছে না, সেখানে ইটের এইচবিবি করা মানে জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়া। এটা সংস্কার-মেরামত বললে ভুল হবে ‘টাকায় কেনা জনদুর্ভোগ।’ এদিকে গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ সড়ক। প্রতিবছরই চলে বিটুমিনের প্রলেপ। তবে প্রলেপ থাকছে না। ভাঙছে সড়ক। তৈরি হচ্ছে খানা-খন্দক। পুরো সড়কই প্রায় আবারও অচল হয়ে পড়েছে। মাটি ভরাট ছাড়াই সড়কের বর্ধিতকরণ, ধুলো-বালির ওপর কার্পেটিং, রাস্তার দু’পাশে পুকুর ও নিম্নমানের কাজের কারণে ধসে যাচ্ছে। নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্যামগঞ্জ বাজার সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ও সড়কে কর্দমাক্ত যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সড়কটি দু’টি জেলার ৪টি উপজেলার জন্য অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। নেত্রকোনা জেলা সদর, পুর্বধলা, ময়মনসিংহের তারাকান্দা, ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলা থেকে গৌরীপুরে স্বল্প সময়ে আসার একমাত্র সড়ক। শ্যামগঞ্জ বাজারের রেললাইন সংলগ্নস্থানে বড়খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কে কাউরাটে একমাত্র এক কিলোমিটারে ১৩৭টি খানা-খন্দক। গাভীশিমুল এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়েই উঠে গেছে বিটুমিন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পর থেকে সাংবাদিক আজম জহিরুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারে রয়েছে ৬টি খানা-খন্দক। মইলাকান্দা ও ঝিনাইকান্দি এলাকায় বড় বড় গর্তের কারণে এ সড়কে যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গৌরীপুর উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের অধিনে গত ৬বছরে এ সড়কটি কয়েক ধাপে মেরামত করা হয়। তবু গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কেরও করুণ হালের চিত্র বদলাচ্ছে না। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্যামগঞ্জ বাজারেও বিশাল গর্ত। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকির অভাব, অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী, নির্মাণের বর্ণনা জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য সাইন বোর্ড প্রদান বাধ্যতামুলক। তবে প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ কাজের কোন সাইন বোর্ড না থাকায় এলাকাবাসীও জানতে পারেনি উন্নয়নের বর্ণনা। শ্যামগঞ্জের আব্দুল খালেক জানান, গতবছর কয়েক দফায় শ্যামগঞ্জ বাজারে মাটি ভরাট ও পাকাকরণ করা হয়েছে। দু’পাশেই দোকানপাট পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা এ ছাড়া মেরামতকৃত রাস্তা ২মাসও ঠিকছে না। লামাপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদিন জানান, রাস্তার দু’পাশে প্রশস্ত করা হয়েছে। মাটি ভরাট ছাড়াই নির্মিত সড়কও ধসে পড়ছে। শ্যামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী নীলুফার ইয়াসমিন বলেন, গর্ত কতোটুকু বুঝা যায় না। তাই প্রায়শঃ গর্তে পড়ে বই-খাতা কলমসহ সব ভিজে বাড়িতে যেতে হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় জনদুর্ভোগ লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে এ সড়কটি সাময়িক সংস্কারে এইচবিবি করা উদ্যোগ নেয় গৌরীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের অধিনে প্রায় ৪০লাখ ৬১হাজার টাকা ব্যয়ে এবছর ইটের সোলিং করা হয়। অপরদিকে এ সড়কের রামগোপালপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কের বালুয়াপাড়া পর্যন্ত ৮৩লক্ষ ৮৬হাজার টাকা ব্যয়ে সংস্কার ও মেরামত করা হয়। একই সড়কে শ্যামগঞ্জ পর্যন্ত ৫জুন/১৪সনে ১ কোটি ৮৫লক্ষ ৬০হাজার ৬৫২টাকায় সংস্কার ও মেরামত করে। এ সড়কের দেড় কিলোমিটার ৪৩লাখ টাকায় ২০১৬-১৭অর্থবৎসরে মেরামত ও সংস্কার করা হয়। ২০১৮সনে এ সড়কটি পল্লী সড়ক ও কালভার্ট মেরামত কর্মসূচী (এঙইগ) এর অধিনে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড বাজার থেকে শ্যামগঞ্জ জিসি সড়ক ভায়া গৌরীপুর জিসি মেরামত কাজের ৬৪৫০-১৩৭৫৩ মিটারের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কে.কে. এন্টারপ্রাইজ, পটুয়াখালীর সাথে ২ কোটি ৭৭লাখ ৯৯হাজার ৪৫৪টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। নির্মাণ কাজের ত্রুটি ও ধুলা-বালিতে কার্পেটিং নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারপরেও প্রকৌশল বিভাগ ছিলো নিশ্চুপ। ফলে আবারও রাস্তাটির জনদুর্ভোগের শিকার সাধারণ মানুষ।