‘নদীর প্রাণ আছে, তাকে বাঁচতে দাও’ স্লোগানকে ধারণ করে ফটো সাংবাদিক কাকলী প্রধানের তিনদিন ব্যাপী ১০০ নদীর উন্মুক্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের দমদমিয়া বিআইডব্লিউটিএ এর জেটিঘাটে নাফনদীর পাড়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। আজ শুক্রবার বিকাল চারটায় চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, নদীর সাথে ওতপ্রোতভাবে আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধ রয়েছে। তাই একশত নদীর ছবি প্রদর্শনীর এই কাজটির সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা। আমাদের চেয়ে বেশি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য আলোকচিত্রী কাকলী প্রধানের। বাংলাদেশের মরে যাওয়া নদীগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশের নদী হারিয়ে যাওয়ার যে অস্তিস্তের সংকট তা থেকে দেশের মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের শরীরের যে রক্তশিরার মতো বাংলাদেশের নদী প্রবাহ। আমাদের রক্তশিরা বন্ধ হয়ে গেলে যেমন বাঁচতে পারবনা সেরকম আমাদের নদীগুলোও যদি বন্ধ হয়ে যায় আমাদের দেশটা মরে যাবে, আমাদের অর্থনীতি অগ্রগতি ধরে রাখতে পারবনা। তাই সবার অবস্থান থেকে নদী দখল দূষণ এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের দায়িত্ব শুধু নদী রক্ষা না, নদী ভিত্তিক যে সৌন্দর্য্য সেটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে, আরো বেশি পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন এখানে এসে আমাদের দেশের নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। এতে আমাদের অর্থনীতি যেমন একটা বিরাট প্রভাব পড়বে তেমন বাংলাদেশের সৌন্দয্যের সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে।
এখন টেলিভিশনের তোফায়েল আহমেদ এর সঞ্চালনায় ১০০ ছবির আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনীতে ফটো সাংবাদিক কাকলী প্রধান ছাড়াও অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠের ভিজিয়্যাল এডিটর মাহবুবুল হক, বিআইডব্লিউটিএ এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক নয়ন শীল,, টেকনাফের ট্রাফিক সুপার ভাইজর মো. জহির উদ্দীন ভুঁইঞা, টেকনাফ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল। এছাড়া নদীর উন্মুক্ত চিত্র প্রদর্শনীতে স্থানীয় নদী পাড়ের সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সেন্ট মার্টিন ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করেছে দেশের ১০০ নদীর নজরকাড়া ছবি। প্রদর্শনীতে কালের কন্ঠের শুভসংঘের সদস্যরা স্বতস্ফূর্তভাবে উপস্থিত ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছরামপুর থেকে সেন্ট মার্টিন ঘুরতে আসা তিতাস পাড়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ সামি বলেন, এখানে ঘুরতে এসে নদীর আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়েছি। সাথে নিজের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত তিতাস নদীর ছবি দেখে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছি। প্রদর্শনীর সব ছবিগুলো বাংলাদেশের নদীগুলোর বর্তমান অবস্থানকে তুলে ধরেছে আলোকচিত্রী। প্রদর্শনীর কিছু ছবিতে দখল-দূষণ দেখে কষ্ট লেগেছে, তবে অন্য ছবিগুলোতে দেশের নদীর সৌন্দয্য ও সম্ভাবনা দেখে ভালো লেগেছে। এ ধরনের প্রদর্শনী সারা দেশে ছড়িয়ে পড়–ক, দেশের মানুষ দেখুক, জানুক।
নিজের ১০০ নদীর ছবির উন্মুক্ত প্রদর্শনী প্রসঙ্গে ফটো সাংবাদিক কাকলী প্রধান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রবাহমান নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমি এবং প্রকাশনী সংস্থা ইকরি মিকরি সাধারণ মানুষের কাছে নদীর বিপন্নতা ও শিশুদের কাছে নদীর রূপ, প্রকৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
প্রদর্শনীতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী ওমর হায়াত বলেন, শহরের গ্যালারিতে গিয়ে প্রদর্শনীতে ছবি দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু নাফ নদীর পাড়ে দেশের ১০০ নদী নিয়ে উন্মুক্ত যে প্রদর্শনী সেখানে এসে শুধু ছবি দেখা নয়, অনেক কিছু শেখাও হয়েছে। প্রদর্শনীর এসব ছবি দেখে নদীর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়লাম, নিজের মধ্যে নদী সম্পর্কে একটা সচেতনতাবোধ জাগ্রত হয়েছে।
শুভসংঘের সদস্য জসীম উদ্দীন বলেন, ছবিতে নদী দূষণের চিত্র দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তাই আজকের প্রদর্শনীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রদর্শনীতে আসা লোকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকসহ অন্যান্য আবর্জনাগুলো নিজে খুড়িয়ে নিয়েছি বস্তায়, তবু নদীতে পড়তে দেইনি। এখন থেকে অনেক বেশি মানুষকে বুঝাবো নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে।