কেউ রাস্তার পাশে কেউ মাটিতে বসে,কেউ বারান্দায় কিংবা বাড়ির আঙিনায়,কেউবা বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে আপন মনে তৈরি করছেন বাঁশের চাটাই।এ কাজের ফাঁকে কেউ মোবাইলে গান শুনছেন কেউ বা আবার মুখে পান চিবিয়ে মেতেছেন খোস গল্পে।এভাবে কখন যে সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায় তা বুঝবার কোন উপায় নেই।এভাবে এ কথাগুলো বললেন নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ডিমলা নিজপাড়া গ্রামের ধারাবেচাটারীর মমিনা বেগম (৪০)।মমিনা বেগম পেশায় একজন গৃহিণী।তার স্বামী দুলাল হোসেন কর্ম অক্ষম হওয়ায় সে গাথুনী চাটাই,ডোল,খাঁচা বাঁশের তৈরী এসব জিনিস উপজেলার বিভিন্ন হাট ও বাজারে বিকতে ভ্যানযোগে নিয়ে যায় এবং এসব বিক্রি৷ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। যার ফলে কিনতে পেরেছে গ্রামের ৩বিঘা কৃষি জমি। তাদের সফলতা দেখে প্রতিবেশীরা এ পেশায় সফলতা অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর কারনে গ্রামের এই পাড়ার নাম হয়ে উঠে ধারাবেচাটারী। মমিনা বেগম বাবার বাড়িতে থাকাকালীন এ কাজ জানতেন না।স্বামীর বাড়িতে এসেই এ কাজ শিখেছেন। সংসারের পাশাপাশি কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব বাঁশের পণ্য তৈরি করে স্বামীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন।স্বামী দুলাল হোসেন সহ পাড়ার বেশ কয়েকজন বাঁশের পাতি তুলে আর পরিবারের সবাই চাটাই বানায়।এভাবে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ টি বাঁশের চাটাই তৈরি করতে পারেন তারা। যার বাজার মূল্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।চারটি চাটাই তৈরি করতে পাকাপোক্ত কাঁচা দুইটি বাঁশের প্রয়োজন হয়।যার বাজার মুল্য ২০০ টাকা।এ উপকরণের খরচ বাদ দিলে প্রতিদিন তাদের ইনকাম হয় ৪শ থেকে ৫শত টাকা।এতে যা আয় হয় তা দিয়েই তাদের সংসার চলে।এ বিষয়ে গ্রামের বেশ কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা জানান,এ গ্রামের ৫০ থেকে ৬০ টি পরিবার এ বাঁশের চাটাই তৈরির কাজে জড়িত আছেন।বাঁশ দিয়ে চাটাই তৈরির শিল্প এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষেরই একমাত্র পেশা।এখানে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্বাচ্ছন্দে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এ কাজে বাড়ির বউ-ঝি থেকে শুরু করে, স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়ার পাশাপাশি বড়দের কাজে সহযোগিতা করে থাকেন।তৈরিকৃত এসব বাঁশের চাটাই পরবর্তীতে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।বছরের পর বছর তারা বাঁশ দিয়ে এ চাটাই তৈরি করেন।অপর দিকে এ গ্রামের চাটাই কারিগরা জানান,বর্তমানে বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাটাই তৈরিতে খরচ কিছুটা বেশি হচ্ছে। সেই সঙ্গে অর্থের অভাবে তারা চাহিদা মাফিক বাঁশ কিনতে পারছেন না। সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে যদি তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করা যায় তাহলে এ চাটাই শিল্প রক্ষা ও প্রসার করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তারা।