নদী-চর-খাল-বিল গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন। টাঙ্গাইলের ফুসফুসখ্যাত মধুপুরের শাল গজারির বন নব্বইয়ের দশক থেকে পর্যায়ক্রমে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বের কারণে বিলীন হওয়ার পথে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, একসময় ৪৫ হাজার ৫৬৫.৩৮ একর এলাকা জুড়ে মধুপুরের শালবন বিস্তৃত ছিল। দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় প্রভাবশালীদের জবর দখলের কারণে শালবনের বিস্তৃতি এসে দাড়িয়েছে ৯ হাজার একরে। এ হিসেবে মধুপুর বনাঞ্চলের পাঁচ ভাগের চার ভাগই এখন জবর দখলকারীদের নিয়ন্ত্রণে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনীতিক ও বনাঞ্চলের নিকটবর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে বহিরাগত প্রভাবশালীরা স্থানীয় নৃ-জনগোষ্ঠীদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার একর বনভূমি উজাড় করে নিচ্ছে। সম্প্রতি দোখলা রেঞ্জ অফিসের প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব পার্শ্বের গহীন শালবনের মাগিচোরাচালা এলাকায় গজারি, সিদা, আজুগিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩ শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে স্থানীয় একটি চক্র।
সরেজমিনে, মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা রেঞ্জের আওতাধীন মাগিচোরাচালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বনখেকো একটি চক্র বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে গেছে। শুধু ডালপালাগুলো ওইখানে অযাচিতভাবে পড়ে আছে। উজারকৃত বনের পাশেই রয়েছে কয়েকটি উডলট বাগান। জয়নাগাছা গ্রামের দক্ষিণপার্শ্বে ওইসব উডলট বাগানের মালিক সেলিম মিয়া, রনজিত মেম্বার ও দেলু ফকির। তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, পার্শ্ববর্তী হরিনধরা গ্রামের তোতা মিয়া বন বিভাগকে ম্যানেজ করে প্রাকৃতিক বাগানের গাছ কেটে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে আনারস রোপনের পায়তারা করছে।
তারা আরো জানান, দোখলা রেঞ্জ অফিসার হামিদুল ইসলাম তোতা মিয়ার চাচা শ্বশুর হওয়ার সুবাদে অর্থের বিনিময়ে তাকে ম্যানেজ করে গাছ কেটে আনারস বাগান করার পায়তারা করছে। তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নতুন নতুন বনভূমির গাছ কেটে প্রথমে জমিটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। পরে ওই জমিতে আনারস কলাসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। এভাবেই পর্যায়ক্রমে মধুপুর গড়ের হাজার হাজার একর বনভূমি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে।
তোতা মিয়া জানান, তিনি কখনো কোন বনের জায়গা জবর দখল করেননি। তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে আনারস কলাসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে থাকেন। এছাড়া অন্যের কলা বাগান কিনেও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কলা বিক্রি করে থাকেন। রেঞ্জ অফিসার হামিদুল হক তার চাচা শ্বশুর নন।
মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা রেঞ্জের দায়িত্বরত বিট কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম জানান, তিনি গত মাসে এই রেঞ্জে দায়িত্ব নিয়েছেন। দীর্ঘদিনের গাছকাটা এবং বনের জায়গা জবর-দখলের প্রচলন থাকলেও তিনি এসে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় জবর-দখলকারীরাই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটাচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান জানান, বনের গাছ চুরি ও ভূমি জবর-দখলের বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।