সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে গরমে। এদিকে বকশিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের উত্তেজনা এবং নির্বাচনী মাঠের গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। উপজেলা নির্বাচন প্রভাব মুক্ত রাখতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনকে প্রার্থী না হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দলীয় প্রধানের সেই নির্দেশনা অমান্য করে ভোটের মাঠে রয়ে গেলেন বকশিগঞ্জ-১ (দেওয়ানগঞ্জ–বকশিগঞ্জ) আসনের এমপির ভাই নজরুল ইসলাম সাত্তার। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশ- কোনো সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীদের আত্মীয়রা ভোটের মাঠে লড়তে পারবেন না। এজন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে তৃণমূলকে সতর্ক করেছেন। একই সঙ্গে যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র। দলের উচ্চ পর্যায়ের কড়া সিদ্ধান্তেও গুরুত্ব নেই। দলীয় প্রধানের সেই নির্দেশনা অমান্য করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও ভোটের মাঠে রয়ে গেলেন বকশিগঞ্জ-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ ) আসনের এমপির ভাই নজরুল ইসলাম সাত্তার। চেয়ারম্যান পদে সংসদ সদস্যদের স্বজনদের বসাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বকশিগঞ্জ উপজেলায় দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিভক্ত হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা। বড় ভাই জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ–বকশিগঞ্জ) আসনের এমপি হওয়ার সুবাদে আরো বেশি পরিচিতি পেয়েছেন নজরুল ইসলাম সাত্তার ৷ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম সাত্তার বকশিগঞ্জ উপজেলার নীলাক্ষিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। অভিযোগ আছে দলের পদে না থাকলেও দলীয় লোকজনকে ঠিকই ব্যবহার করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা। বকশিগঞ্জ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে লড়তে এরইমধ্যে তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশকে ৷ বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িতদের নিয়েই ভোটের যুদ্ধে নেমেছেন সাত্তার। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক রাজন মিয়ার নেতৃত্বে চলছে এই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছেন উপজেলার ছাত্রত্বহীন ছাত্রলীগ নেতারা, রয়েছেন বিবাহিত ছাত্রলীগ নেতা ও বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিতরা। ছাত্রলীগের কিছু সাধারণ কর্মীও বাধ্য হয়ে রাজন মিয়াকে অনুসরণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা সজল, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ছাইদুর রহমান লাল ও তার মদদদাতা নজরুল ইসলাম ইদু নজরুল ইসলাম সাত্তারের পক্ষে কাজ করছেন। এই নেতারা এমপির নাম ভাংগিয়ে আসন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ না দেয়ার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রচারণায় অংশ নিতে বাধ্য করছেন সাধারণ ছাত্রলীগ কর্মীদের। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভাষ্যমতে, বহু বিবাহ, নারী নির্যাতন, হাইস্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে নজরুল ইসলাম সাত্তারের বিরুদ্ধে ৷ তিনি নিলক্ষিয়া আর.জে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। নিজের পদ কাজে লাগিয়ে শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ দিকে নির্বাচনে মাঠে থাকলেও কোনঠাসা অন্যান্য প্রার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, এমপি নূর মোহাম্মদের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এই সাত্তারই যথেষ্ট। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে নজরুল ইসলাম সাত্তার বলেন, যেখানে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চান সেখানে আমি কেন নির্বাচন করতে পারবো না? আমি দলের কোনো পদে নাই। আমার সংসার আলাদা। দীর্ঘদিন থেকে এলাকার সাধারণ জনগনের সাথে মেলামেশা করে আসছি আমার গ্রহন যোগ্যতা আছে। আমার বিরুদ্ধে হাইস্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে অভিযোগের কথা জানতে চাইলেন এ ব্যাপারে আপনাকে অনুরোধ করবো আপনি সরেজমিনে এসে তাদের সাথে কথা বলুন তাহলেই সত্য মিথ্যা জানতে পারবেন। নারী নির্যাতনের ব্যাপারে আমি বলবো এটা আমার জীবনে একটা ভুল হয়েছিল। তবে আইনী লড়াইয়ে আমি এটা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা যদি কেউ না মানেন তাহলে আমরা স্থানীয় ভাবে কি করে সিদ্ধান্ত নেই। এরপরেও আমরা এ ব্যাপারে একাধিক বার নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেও এর সুরাহা করতে পারিনি। যেহেতু আমিও একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজেই এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, নজরুল ইসলাম সাত্তার দলের কেউ না। দলের হলে তাকে বহিস্কার করা হতো। ভাই হিসেবে তাকে নির্বাচনে না যেতে অনুরোধ করা হলেও সাত্তার এটা মানেনি। আমার কথা শোনে না। আমি কি করবো! আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি৷