শীত এলেই প্রতিবছর ভোলার চরফ্যাশনে চরাঞ্চলে অতিথি পাখির দল এসে জড়ো হতে শুরু করে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জেলার বিভিন্ন চর অতিথি পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত হয়। বিশেষ করে ডুবোচরগুলোতে তাকালেই দেখা যায় দল বেঁধে সারি সারি পাখির সমাহার।
বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে এসব দ্বীপের নিঝুম প্রান্তরে। সাইবেরিয়াসহ দূর দূরান্ত থেকে আসা এসব অতিথি পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য মুগ্ধ করে প্রকৃতি প্রেমীদের। একইসাথে দেখা মেলে স্থানীয় বিহঙ্গকূলেরও। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা ঢালচর, মনপুরা, কলাতলীর চর, চর কুকরি মুকরি, চরনিজাম, চর পাতিলা, ডেগরারচরসহ মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, চর চটকিমারা, মদনপুরা সহ বিভিন্ন চরে পাখিদের আনা-গোনা মন কাড়ে যে কারো।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে সাগর-নদী, চর আর সবুজ গহীন বনের সমাহার। দু’পাশে পাখিদের কিচির-মিচির আওয়াজ আর কলকাকলি শোনা যায় কান পাতলেই। এমন দৃশ্যের দেখা মেলে সকাল-বিকাল। শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ডানা ঝাপটে পাখিদের উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য মন ভোলায় পাখি প্রেমীদের।
সাধারণত এসব চরে জুলফি পানচিল, গাঙ্গচিল, সোনাজিরিয়া, উত্তরীয় লেঞ্জাহাঁস, কালোলেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা, ধূসর মাথা টিটি, সিথি হাঁস, খুন্তে হাস, খয়রা চখাচোখি, ছোট পাকৌরী, ছোট বগা, বড় বগা, ধূসর বগা, পাতি হাস, কালো মাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থ জিরিয়া, গো বগা, মেটে রাজ হাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতি চেগাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।
চর কুকরী-মুকরীর চর-পাতিলায় দেশি-বিদেশি পাখি দেখার জন্য বন বিভাগ কতৃক নির্মিত হয়েছে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকেই এই চরের অতিথি পাখি সহজেই দেখা যায়। এছাড়া পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু, ছাতা, বেঞ্চ ও একটি ব্যারাকও নির্মাণ করা হয়েছে। শীতের এই সময়টাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখি দেখার জন্য এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
পাখি দেখতে আসা পর্যটক রুবেল আশরাফুল বলেন, চরে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অতিথি পাখি। দলবেঁধে পাখিদের উড়ে বেড়ানো আর খাবার সংগ্রহের দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। পাখিদের কিচিরমিচিরে এক মনমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন বলেন, প্রতি শীত মৌসুমেই এখানে পাখি দেখার জন্য পর্যটকরা ভীর করেন। পাখি সংরক্ষণ ও বিচরণ নির্বিঘ্নে করতে লিফলেটসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে পাখি শিকারে।
চরফ্যাশন রেঞ্জের কর্মকর্তা বলেন, এ বছরেও আমাদের চরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। এখানকার চরগুলো অতিথি পাখিদের জন্য বিখ্যাত বহুবছর ধরেই। এসব পাখিদের কেউ যাতে শিকার করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া আছে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের। প্রতিটি রেঞ্জ থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে।