মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশে পর্যাপ্ত চাল, গম, আলু, ডাল ও ভুট্টার মজুদ রয়েছে। বর্তমানে চালের যে মজুদ আছে তা দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। অন্যদিকে গম, আলু, ভোজ্যতেল, ডাল, এবং ভুট্টার মজুদ দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব যথাক্রমে ২১ জানুয়ারি ২০২১, ৭ এপ্রিল ২০২১, ২১ নভেম্বর ২০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ এবং ৩০ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত। ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ধান কৃষকের ঘরে উঠবে। ফলে দেশে ধান-চাল আমদানি করার প্রয়োজন হবে না।
জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও)-এর সহযোগিতায় প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মহামারীকালে বাংলাদেশের খাদ্য মজুদ ও বাণিজ্য’ শীর্র্ষক ওয়েবিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির বিভিন্ন দিক নিয়ে এ ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়েছিল।
এফএও’র মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের বাজার ও বাণিজ্য নীতি উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান কোভিড-১৯ মহামারীকালে বাংলাদেশের খাদ্য মজুদ ও বাণিজ্য বিষয়ে ওয়েবিনারে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বোরো ধানের উৎপাদন আগের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি হয়েছে। একই সময়ে গমের উৎপাদন হয়েছে ১ দশমিক ২৪৫ মিলিয়ন টন, যা ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর বাইরেও ৫ দশমিক ১ মিলিয়ন টন গম আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা দিয়ে বাংলাদেশে গমের চাহিদা সহজেই পূরণ করা সম্ভব। ড. মনিরুল আরও বলেন, চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে সরকার ৮ লাখ টন ধান এবং ১১ দশমিক ৫ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১০ দশমিক ২০ লাখ টন ধান এবং ৭ দশমিক ৬৭ লাখ টন চাল সংগ্রহ করেছে। জুন ২০১৯ সালের ধান-চাল সংগ্রহের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০২০ সালে ক্রয় লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে ৩১ শতাংশ কম।
ড. মনিরুল হাসান বলেন, ২০১৯-২০ সালে সরকারিভাবে ৭৫ হাজার টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কেনা হয়েছে ৬৪ দশমিক ৫ হাজার টন। পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম নির্বিঘ্নে পরিচালনায় সরকারের যথাসময়ে গম আমদানি করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে ১১ মিলিয়ন টন, যা দিয়ে দেশের আরও ১১ মাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। দেশে বর্তমান ভুট্টার যে মজুদ আছে ১০ মাস পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ হবে। ভোজ্যতেলের চাহিদা মিটাতে বাংলাদেশ আমদানিরনির্ভর। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ পাম অয়েল ও সয়াবিন আমদানি করতে হয়।
এফএও’র মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের প্ল্যানিং অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন স্পেশালিস্ট ভাস্কর গোস্বামী খাদ্যপণ্যের বাণিজ্য বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ভাস্কর গোস্বামী উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত কম ছিল। তবে খাদ্যপণ্যের দাম জুন থেকে নিয়মিত বাড়ছে।
পিআইবি মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের চিফ ট্যাকনিক্যাল অ্যাডভাইজর নাওকি মিনামিগওসি। ওয়েবিনারে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মিটিং দ্য আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের ন্যাশনাল পোভার্টি অ্যান্ড সোশ্যাল প্রোটেকশান অ্যাডভাইজর অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল।