বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের একটি জেলা চুয়াডাঙ্গা। এই জেলাতে গরমের সময় তীব্র গরম এবং শীতের সময় শীত পড়ে বেশী। এ যেন এক মরুভূমির এলাকা। এ কারণে এ জেলাতে সাধারণত খেজুর গাছ, বাবলা গাছ, ফণিমনসা সহ বিভিন্ন কাটাযুক্ত গাছের সংখ্যাও বেশী । শুধু চুয়াডাঙ্গা নয় এর পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহ যেমন, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পাবনা সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাতেও একই অবস্থা। শুধুমাত্র তাপমাত্রা বেড়েছে তাই নয় সাথে চলছে দাবদাহ। এতে কর্মজীবি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা আছে মহাবিপদে। বাংলাদেশে গত ৭৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে এবার সব থেকে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ চলমান রয়েছে। অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের পর এবার দেশে একটানা ২৬ দিনের বেশী সময় ধরে দাবদাহে অসহ্য গরম আর রোদে পুড়ছে মানুষ। আর দেশে এই গরমের প্রধান দাবদাহ শুরু থেকেই চুয়াডাঙ্গা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমের দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল । বর্তমানে ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড এ জেলাবাসীর কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় গত বিশ বছরের বেশী সময় ধরেই শীত-গরমে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ডও হয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০০৩ সালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২০১৪ সালের ২১ মে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করার কথা জানা যায়। এ বছর সে রেকর্ড ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলায় এতো গরম কেনো? এনিয়ে চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জেষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, ভৌগোলিক কারণে সাধারণত চুয়াডাঙ্গায় গরমে তাপমাত্রা বেশী থাকে। আর শীতের সময় তাপমাত্রা কম থাকে। যার ফলে গরমের সময় যেমন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, তেমনি শীতের সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এই জেলায়। চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি রয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও বিশাল এলাকাজুড়ে সমভূমি। আর সমভূমি হওয়ার কারণে এই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহিত হয় ও বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত থাকে। যার ফলে সরাসরি তাপ লাগার কারণে পুরো অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশী থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাস সূর্য লম্বভাবে রশ্মি বা কিরণ দেয়। ফলে প্রচুর গরম অনুভূত হয়। আর তাপের পরিবহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা বায়ু চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ গরম লু-বাতাস যখন চুয়াডাঙ্গার প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এ জেলার তাপমাত্রা অন্যান্য এলাকার চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে। তাপমাত্রার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের মাঝ বরাবর অতিক্রম করেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। সূর্য থেকে চুয়াডাঙ্গার অবস্থান বা সোলার পজিশন ঠিক এই কর্কটক্রান্তি রেখার নিচে। সূর্যের উত্তরায়ণের কারণে তাপমাত্রা বাড়ে। অন্যভাবে বলতে গেলে, এপ্রিল মাসে সূর্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। যার কারণে সূর্যের তাপ বেশি পড়ে এই অঞ্চলে। চুয়াডাঙ্গার আশেপাশে বড় কোন জলাভূমি বা বনভূমি না থাকায় এই অঞ্চলে তীব্র গরম অনুভূত হয়। কারণ কোন অঞ্চলের তাপমাত্রা নির্ভর করে ওই এলাকার ভূ-প্রকৃতি, সমুদ্র থেকে দূরত্ব, স্থলভাগ ও জলভাগের অবস্থান, বনভূমির অবস্থান ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপরে। সর্বশেষ কারণে হলো চুয়াডাঙ্গাতে অতীতের তুলনায় গাছ-পালা কমে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল সাবাড় করা হচ্ছে। এছাড়া নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় গাছ-পালা কমে যাওয়ায় মূলত উষ্ণতা বাড়ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াও অন্যতম কারণ। আর গরমের সময় জলাভূমির স্বল্পতার জন্য আদ্রতা ধরে রাখা যায় না। তাই বেশি গরম অনুভূত হয়। তিনি আরও বলেন, এ বছর এপ্রিল মাসের শুরুতেই প্রথমে মৃদু, তারপর মাঝারি ধরণের তাপপ্রবাহ ছিল। তারপর সেটা এখন তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়ে তা চলমান রয়েছে। গতম কয়েকদিন ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। এটা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৪৮ শতাংশ।