গত শনিবার ৩০ মার্চ বেলা ২টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘সত্যেন সেন: সোনা রংয়ের সোনার মানুষ’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একজন সংগঠক, দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী মানুষ সত্যেন সেনের ১১৭তম জন্মদিবস উপলক্ষে তাঁর জীবনালেখ্য নিয়ে স্মৃতিচারন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও গবেষক জনাব অজয় দাশগুপ্ত। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সুপার নিউমেরারি অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ কামরুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কীপার জনাব আসমা ফেরদৌসি। প্রবন্ধকার বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত ও প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সত্যেন সেনের জীবনের নানামাত্রিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন। যা সত্যেন সেনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে। সত্যেন সেন ছিলেন একজন সংগঠক, দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী মানুষ। তিনি আজকের নতুন প্রজন্মের কাছে এক অনন্য উদাহরণ। তিনি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী জীবনবোধ সম্পন্ন ধারা প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর আদর্শ ও জীবনবোধ তাঁর কর্ম, সাহিত্য, সম্পূর্ণ জীবনাচরণে প্রতিফলিত। মেহনতি ও দুঃখী মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন আমৃত্যু। জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি জেলে কাটিয়েছেন। মানব মুক্তির লক্ষ্যে একটার পর একটা দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে এক অনন্য সাধারণ উদ্যোগে পুরুষ হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। আলোচনায় অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বলেন সত্যেন সেন যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন আজকের প্রজন্মের কাছে তা প্রায় অজানা। জীবনের প্রথম ধাপেই তাঁর মনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাব দানা বাঁধতে থাকে। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত এই দেশে ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা তিনি অনুভব করেছিলেন। ত্রিশের দশকে যুক্ত হয়েছিলেন গোপনীয় সংগঠন যুগান্তরের সাথে এবং পরবর্তীতে চল্লিশের দশকে কৃষক আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। মেহনতি ও খেটে খাওয়া মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, চাওয়া-পাওয়া ছিল সত্যেন সেনের সাহিত্যের মূল প্রতিপাদ্য। তাঁর জীবনের নানা ঘটনা এবং দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাঁর অবদানের জন্য তিনি আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সভাপতি জনাব মোঃ কামরুজ্জামান সত্যেন সেনের মতো সংগ্রামী মানুষের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মত প্রকাশ করেন।