কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ সবজি চাষ করে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার গিরিধরপুর গ্রাম এখন পরিচিতি পেয়েছে পুষ্টি গ্রাম নামে। বাড়ি সংলগ্ন ছোটমত উঠোন। অব্যবহৃত প্রায় দুই শতক জমি। বাঁশ ও নেটের বেড়া দেয়া হয়েছে। বেড়ার ভিতরে কয়েকটি বেড। প্রতিটি বেডের প্রস্থ তিন ফুট। বেডগুলোর কোনটাতে লালশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, লাফাশাক। কোনটাতে লাগানো হয়েছে বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি। ক্ষেতগুলোর একপাশে লাল-সবুজের সাইনবোর্ড। তাতে লিখা ‘পুষ্টি সমৃদ্ধ নিরাপদ ফসল গ্রাম’। নিজনিজ সবজির বাগানে কাজ করছেন কৃষকরা। ক্ষেতে লালশাক, লাফা শাক, পালং শাকের পাশাপাশি লাউ, সীম,বরবটির মাচাং। বিষ ও কীটনাশকমুক্ত হওয়ায় পুষ্টি গ্রামের উৎপাদিত সবজির চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদিত শাকসবজি নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছে পুষ্টি গ্রামের ৭৮ টি পরিবার। লাউয়ের মাচাংএ অন্তত দেড় থেকে দুই শতাধিক লাউ ঝুলছে। শাকসবজির পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচ, জলপাই, আমলকি, হরিতকি,অ্যালোভেরা, লেবু, পেঁপে, চুইঝালের গাছও রয়েছে। বিরল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গিরিধরপুর গ্রামে ১৩৫টি পরিবারের বসবাস। তাদের মধ্যে ৭৮টি পরিবারের উঠোনের অব্যবহৃত জমিতে এই নিরাপদ সবজি চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ চলতি বছরের জানুয়ারিতে গিরিধরপুর গ্রামে ‘কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করেছে। এরজন্য উপকারভোগীদের প্রত্যেকের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে বিভিন্ন বীজ, ১২০কেজি জৈব সার ও ৪০কেজি রাসায়নিক সার, কীটনাশক দমনে সেক্স ফেরোমেন ট্র্যাপ ও হলুদ আঁঠালো ফাঁদসহ বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। উৎপাদনকারীদের সবজি বিক্রি করতে সম্প্রতি কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বীপশিখা থেকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান সরবরাহ করা হয়েছে। ভ্যানে লিখা আছে ‘পুষ্টি গ্রামের নিরাপদ সবজি’। দিনের যেকোন একবেলা ভ্যানে বিভিন্ন শাকসবজি নিয়ে গ্রামের একজন ছুটে যান স্থানীয় বাজারে। বিক্রি শেষে আয়ের কিছু অংশ ভ্যানচালক নিয়ে অবশিষ্ট অংশ উৎপাদনকারীর হাতে তুলে দেন। পুষ্টিবাগানের মালিক নাদিরা বেগম বলেন বিষ-কীটনাশকমুক্ত নিরাপদ ও শৌখিন সবজি চাষে সফলতা পেয়েছি। বাড়ির উঠানে আড়াই শতক মাটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত হয়েছিল কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ এই জমিতে চাষ ও জৈব সার দিয়ে বীজ রোপণ করি। ‘সাত মাস হচে এইলা ক্ষেতের সবজি দিয়াই হামরা পরিবারের ছয়জন খাছি’। গেলবার এইখান জমি থাকিয়াই দেড়মণ রসুন পাইছি। পুষ্টিবাগানের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি। বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেয়েছি। সেই খাদ্যটিকে কতখানি নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ উপায়ে উৎপাদন করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। উপকারভোগীদের সামান্য কিছু উপকরণ ও বীজ সরবরাহ করেছি মাত্র। তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন অনেকেই উদ্ধুদ্ধ হয়ে নিজেরাই আবাদ করছেন। প্রায় ১০মাস হলো এই জমিগুলো অনাবাদি নেই। একটা ফসল শেষ হলেই আরেকটি ফসলের চাষ করছেন কৃষকরা। শুধু তাই নয় এই গ্রামের প্রায় সকলেই উৎপাদিত ফসলের খাদ্য গুনাগুন সম্পর্কেও সচেতন।