বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের পালিত কন্যা নিহার বালা আর নেই।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) নড়াইল সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে। দীর্ঘ ৯ বছর চোখের দৃষ্টিহানী, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভূগছিলেন।
অসুস্থ অবস্থায় বুধবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুপুর ২টার দিকে তিনি মারা যান। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি এক নাতি সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানকে দীর্ঘ দুই দশক সেবাযতœ ও ভালোবাসায় আগলে রেখেছিলেন তার পালিত কন্যা নীহার বালা সাহা। তিনি সুলতানের বাউন্ডুলে জীবনকে নিয়ন্ত্রন করে ছবি আঁকার উৎসাহ যুগিয়েছেন।
পারিবারিক সমস্ত কাজ, শিল্পীর চিড়িয়াখানার পশু পাখিদের সেবাযত্ন, শিল্পীর অসুস্থতা এবং দৈনন্দিন জীবন-যাপনে একমাত্র সেবাময়ী হয়ে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
শিল্পীর মৃত্যুর পর নিহার বালার আর্থিক সংকট শুরু হয়। অশীতিপর নীহার বালা অর্থাভাবে ছানি অপারেশন করতে না পারায় ৯ বছর দৃষ্টিহীন ছিলেন।
জানা যায়, শিল্পী সুলতান শহরের কুরিগ্রামস্থ একটি দ্বিতল জরাজীর্ণ ও ভাঙ্গা বাড়িতে (বর্তমান শিশুস্বগূ ভবন) থাকতেন। নিহার বালার স্বামী হরিপদ সাহা ও দুই কন্যাসহ সুলতানের বাড়ির পাশে বসবাস করতেন। শিল্পীর সাথে হরিপদ সাহার ঘনিষ্ট সম্পর্কের সুবাদে নীহার শিল্পী সুলতানকে কাকু বলে ডাকতেন। সুলতানও তাকে মেয়ের মত স্নেহ করতেন।
১৯৭৫ সালের দিকে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর ছোট ছোট দু’মেয়ে নিয়ে আর্থিক অনিশ্চতার জীবন-যাপন করছেন নীহার বালা। এ সময় আমশয়সহ নানা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে ভূগতে শুরু করেন শিল্পী সুলতান। তখন অসহায় শিল্পীর সেবায় এগিয়ে আসেন নীহার বালা। সেই থেকে নিহার বালা ছোট ভাই দুলাল সাহা এবং শিশু দু’কন্যা বাসনা ও পদ্মকে নিয়ে শিল্পীর বাড়িতে তার বসবাস শুরু করেন।
বর্তমানে তিনি সুলতান কমপ্লেক্সের একটি জায়গায় সরকার থেকে দেওয়া একটি টিনসেড ঘরে নাতি ছেলেসহ পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অসুস্থ্য নীহার বালার শেষ ইচ্ছা ছিল, ‘আমি যে বাড়িতে বসবাস করছি সেটি যেন আমার নামে লিখে দেওয়া হয়’।
বরেণ্য এই শিল্পী ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট শহরের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহন করেন এবং ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তাঁর প্রয়াণ ঘটে।