‘জাতীয় পতাকা দেখতে আমার কাছে ধানক্ষেতের মতো মনে হয়। ক্ষেতে যেমন ঢেউ ওঠে, বাতাসে দোল খাওয়া পতাকার ঢেউও তেমন। এই পতাকা বিক্রি করে আমরা ভাত খাই, তাই পতাকা আমার কাছে মায়ের মতো।’মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ইয়াসিন শেখ মাসুদের কথাগুলো যেন মুক্তোর মতো ঝরছিল। ক্ষণিকের জন্য মনে হচ্ছিলো, ফুটপাতে দাঁড়ানো কোনো বালক নয় বরং জনাকীর্ণ হলরুমে বক্তৃতা দিচ্ছেন কোনো প্রাজ্ঞজন।জাতীয় পতাকা নিয়ে এমন প্রাঞ্জল ভাষ্য দেয়া মাসুদ একজন পতাকা ফেরিওয়ালা। বিজয়ের মাস উপলক্ষে পতাকা বিক্রির জন্য বাবা ও দাদার সঙ্গে ঢাকার বিক্রমপুর থেকে চট্টগ্রাম এসেছে সে। জাতীয় পতাকা বিক্রি করে তাদের অন্ন জোটে। তাই পতাকা নিয়ে তার অনুভূতিও সহজ-সরল।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে দাঁড়িয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থী ইয়াসিন শেখ মাসুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো এ প্রতিবেদকের।মাসুদ জানায়, সে ঢাকার বিক্রমপুরে একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করে। মাদরাসা বন্ধ থাকায় বাবা ও দাদার সঙ্গে চট্টগ্রাম এসেছে। পতাকা তৈরি ও বিক্রি তাদের পারিবারিক ব্যবসা। এবারই প্রথম সে পতাকা বিক্রি করছে, এর আগে সে কখনো রাস্তায় পতাকা বিক্রি করেনি।মাসুদ বলে, ‘এই পতাকা আমাদের মাদরাসাতেও তোলা হয়, দেখতে ভালো লাগে। এখন পতাকা বিক্রি করতেও ভালো লাগছে। তবে এখনো খুব বেশি বিক্রি করতে পারি নাই। গতকাল বিক্রি করছিলাম ৫০০ টাকা, আজ এখনও বিক্রি শুরু করতে পারি নাই। দাদা বলছে করোনার কারণে এবার পতাকা বিক্রি কম।’আন্দরকিল্লা মোড়েই কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে পতাকা বিক্রি করছিলেন মাসুদের দাদা মো. ফেরদৌস শেখ।
তিনি জানান, প্রায় দুই হাজার পতাকা নিয়ে শনিবার তারা চট্টগ্রামে এসেছেন। মাদরাসা বন্ধ থাকায় নাতি মাসুদকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন, যাতে সে পারিবারিক ব্যবসাটা শিখতে পারে।ফেরদৌস শেখ বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। সারাবছর ঢাকাতেই পতাকা বিক্রি করি। কিন্তু বিজয় দিবস-স্বাধীনতা দিবসে কিছু বাড়তি লাভের আসায় চট্টগ্রাম আসি। গত ১২ বছর ধরে এভাবে চট্টগ্রামে পতাকা বিক্রি করতে আসি। তবে এবার বেচা-বিক্রি মোটামুটি। করোনার কারণে মানুষের আনন্দ নাই।’পতাকা বিক্রি করে কেমন লাভ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে নিচে ১০ টাকা থেকে দুই-আড়াইশ টাকার পতাকাও আছে। প্রতিবার এমন মৌসুমে ৩০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়, তবে এবার কত হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।’