রাশিয়া ও জার্মানিতে ১৯ বছর প্রবাসে কাটানো তড়িৎ প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর এখন চট্টগ্রামের গরিব ও অসহায় মানুষের পরম বন্ধু। করোনাকালে অসুস্থ রোগীর বাসায় নিজেই পৌঁছে দিয়েছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার, সরবরাহ করেছেন ওষুধও। খাদ্য সংকটে পড়া দরিদ্র পরিবারে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি করোনাকালে প্রতিদিনই ফুটপাতে বিলি করেছেন রান্না করা খাবারের প্যাকেটও। অর্ধশত মানুষের সৎকারের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। শুধু করোনাকালই নয়, ঈদে হতদরিদ্র মানুষের পোশাক দেওয়ার পাশাপাশি বিলি করেছেন সেমাই-চিনিও। অনেককে করেছেন অর্থ সহায়তা। অসহায় ও গরিব মানুষের মন ভরিয়ে দিয়েছেন প্রশান্তিতে, মুখে ফুটিয়ে তুলেছেন এক চিলতে হাসি । এবার পূজায়ও তিনি হাজির হয়ে গিয়েছেন দরিদ্র মানুষের কাতারে। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে নগরীর চন্দনপুরা, চকবাজার এলাকায় অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় দুই শতাধিক সনাতন পরিবারকে পূজার উপহার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। গত মঙ্গল ও বুধবার তিনি এ মহৎ কাজ করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন শহরের বেশক’টি পিছিয়ে পড়া এলাকা। মানবিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর বলেন, ‘ছোট থেকে দেশে বড় হলেও দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। দেশ ও বিদেশ ঘুরে শুধু মানুষকে ভালোবাসতেই শিখেছি। প্রবাসে থাকার সময়ও অসহায় মানুষের সেবা করেছি। এখন দেশে এসেও মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। মানুষের সেবা করাটাই কর্ম ও ধর্ম হিসেবে একাকার হয়ে মিশে গেছে আমার হৃদয়ে। করোনাকালে নিজের তহবিল থেকে প্রায় ২১ লাখ টাকার সহায়তা করেছি মানুষকে। ঈদের পর এবার পূজায়ও মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। মানুষের মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই।’ করোনাযোদ্ধা প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর চট্টগ্রামের এক আলোকিত পরিবারের সন্তান। তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রণজিৎ কুমার ধর ও চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রীতা দত্তের একমাত্র ছেলে। জ্যোতির্ময় ধর জার্মান ইনস্টিটউট অব অলটারনেটিভ এনার্জিতে রিসার্চ অফিসার ও জার্মান ইনস্টিটউট অব অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তড়িৎ প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ১৯ বছর জার্মানিতে বসবাস করলেও করোনার আগে দেশে আসেন। এরপরই মুখোমুখি হন করোনার। গরিব ও অসহায় মানুষের দুঃখ ও কষ্ট দেখে নেমে পড়েন মানব সেবায় । ‘লকডাউন’-এর সময় মানুষ যখন ঘরবন্দি ছিলেন, তখন জ্যোতির্ময় ছুটে গিয়েছেন খাবার শেষ হয়ে যাওয়া মানুষের ঘরে খাবার নিয়ে । ২৭ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শহরের পাঁচ হাজারের বেশি অসহায় ও ভাসমান রিকশাচালক, ভ্যানচালক, বস্তির বাসিন্দাসহ নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। নিজের ও দুই বন্ধুর সহযোগিতায় ২১ লাখ টাকার উপহার তুলে দিয়েছেন মানুষের হাতে। ৪৭ জন গণমাধ্যমকর্মী, ৫০ জন সংবাদপত্র কর্মচারীর পরিবারকে ১০ দিনের খাদ্য দিয়েছেন। তার সহযোগিতা পেয়েছে বেশ কয়েকটি অনাথ আশ্রম ও এতিমখানায়ও। গত ঈদে করোনায় কর্মহীন আড়াইশ’ পরিবারের হাতে তারা তুলে দেন ঈদ উপহার। সঙ্গে ছিল ১০ দিনের খাদ্যসামগ্রী । এবারের পূজায় এখন পর্যন্ত তিনশ পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি। তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন পূজার উপহার ও অর্থ। নিজস্ব মানবিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তিনি যুক্ত আছেন যুব রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে। তার সহায়তায় যুব রেড ক্রিসেন্ট পরিচালনা করছেন সপ্তাহব্যাপী মেডিকেল ক্যাম্পও। এই ক্যাম্পে দুই হাজারের বেশি মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেয়েছেন। তিনি যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের একজন স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে অসুস্থ রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপোর্ট টিমের প্রধান উদ্যোক্তা ও সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।