সোমবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টার্সে মান্যবর পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার) পিপিএম-সেবা মহোদয় আড়ংঘাটা থানা পুলিশের অভিযানে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ২টি এম্পটি কার্তুজসহ সাবেক মেম্বর আরিফ হত্যার ঘটনায় জড়িত ২ জন আসামিকে গ্রেফতারের পরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মিলিত হন। এ সময়ে কেএমপি’র মান্যবর পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার) পিপিএম-সেবা মহোদয় প্রেস বিফ্রিংয়ে বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর রয়েছে। আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, কিশোর গ্যাং, স্বর্ণ চোরাচালানকারী, মাদক ব্যবসায়ী, জঙ্গি, অস্ত্র-গোলাবারুদ ব্যবসায়ী, চোরাই মোটরসাইকেল, জুয়াড়ি, বিকাশ এবং অনলাইন প্রতারণায় জড়িত প্রতারক, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজের প্রভাব বিস্তার করে, নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদেরকেও আমরা সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ জুন রাতে লোডশেডিংয়ের সময়ে সাবেক মেম্বর আরিফ বাড়ির বাইরের গেটে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা মোটর সাইকেলযোগে এসে তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। উক্ত হত্যার ঘটনায় আরিফের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে এজাহার দায়ের করেন কেএমপি’র আড়ংঘাটা থানার। যায় মামলা নং-১০, তারিখ-২৫/৬/২০২৪, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। উক্ত ঘটনায় হত্যার কারণ অনুসন্ধানে এবং হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে থানা এবং গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ সমন্বয়ে একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করা হয়। উক্ত হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত ১ জন আসামীকে বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেফতার করে। উক্ত মামলায় পরবর্তীতে আরও ২জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতাকৃত আসামীরা হত্যাকান্ডে সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তাদের স্বীকারোক্তিতে প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক আড়ংঘাটা থানা পুলিশ মোঃ রিয়াদ সানা(১৯), পিতা-মিল্ট সানা, সাং-ল্যাবরেটরী মোড়, থানা-আাড়ংঘাটা, খুলনা মহানগরীকে গ্রেফতার করে। রিয়াদ সানাকে গ্রেফতারের পর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেও আরিফ মেম্বর হত্যাকান্ডে সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে সে আরও জানায় তার বন্ধু মোঃ বোরহান উদ্দিনও উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত এবং তার হেফাজতে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি রয়েছে। রিয়াদ সানার প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক আড়ংঘাটা থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম খুলনা নগরীর দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা গোলকধাম মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গত ২৮ জুলাই দিবাগত রাতে আসামী বোরহান উদ্দিন (১৯) পিতা মোঃ শামিম মোড়ল, সাং-বাসা নং-মহেশ্বরপাশা গোলকধাম মোড়, থানা-দৌলতপুর, খুলনা মহানগরীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তার হেফাজতে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি রয়েছে বলে সে স্বীকার করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আসামির বাসার ২য় তলার একটি ট্রাংকের মধ্যে কাপড়ের তৈরি ব্যাগের ভিতর থেকে ১টি কাটা বন্দুক, ১টি ম্যাগজিনসহ পিস্তল, ১টি ওয়ান শ্যুটার গান, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ২টি এম্পটি কার্তুজ আসামীর নিজ হাতে বের করে দিয়ে উপস্থিত নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সম্মুখে থেকে পুলিশ আসামিকে হেফাজতে নেয়। সকল গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার পাশাপাশি দৌলতপুর থানায় অস্ত্র আইনেও মামলা রুজু করা হয়েছে কেএমপি’র দৌলতপুর থানার। যার মামলা নং-২৪, ২৯/৭/২০২৪, ধারা-১৮৭৮ সালের দি আর্মস এ্যাক্ট এর ১৯ অ । গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতঃ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস, উদ্ধারকৃত অস্ত্র অন্য কোথাও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা এবং ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিলো কিনা, পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে কারা জড়িত তার মূল রহস্য উদঘাটনপূর্বক জড়িত অন্যান্য আসামীদেরকেও আইনের আওতায় আনার জোর পরিকল্পনা রয়েছে। উল্লিখিত সাবেক মেম্বর হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আড়ংঘাটা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ মিনহাজুল ইসলাম। নগরীর আড়ংঘাটা থানার সাবেক মেম্বর আরিফ হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের জোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত এবং আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। উল্লেখ্য গ্রেফতারকৃত আসামী রিয়াদ সানা খানজাহান আলী আদর্শ কলেজের ছাত্র এবং তার বাবা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং অপর আসামী বোরহান উদ্দিন হাজী মহসীন কলেজের ছাত্র এবং তার বাবা ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আসামী রিয়াদ সানা ছাত্র হলেও মূলত সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছিল বলে তার সিডিএমএস পর্যালোচনা করে জানা যায়। উক্ত প্রেস বিফ্রিংয়ে কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এ্যাডমিন এন্ড ফিন্যান্স) সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল, অতিঃ দায়িত্বে ক্রাইম এন্ড অপারেশন্স) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, পিপিএম-সেবা, অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) সোনালী সেন, পিপিএম-সেবা, অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) মোহাঃ আহসান হাবীব, পিপিএম, সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু পিসি) মোঃ ইমদাদুল হক, সহকারী পুলিশ কমিশনার (খালিশপুর জোন) মোঃ নাসিম এ-গুলশান, আড়ংঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন এবং উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মিনহাজুল ইসলামসহ এ সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।