চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ফুটপাত কেন্দ্রিক ঈদ বাজার। বেশ কিছুদিন আগে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করলেও ঈদকে ঘিরে ফের ফিরে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদ বাজারে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে ফুটপাতের দোকানগুলো। ফলে যতই ঘনিয়ে আসছে ঈদ ততই জমে উঠছে ফুটপাতের বাজার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ বাজার ঘিরে সারা বছর আমাদের প্রস্তুতি থাকে। কিন্তু এ বছর উচ্ছেদ করে সারা বছরের প্রস্তুতি শেষ করে দিয়েছে। তারপরও যে ব্যবসা হচ্ছে, ক্রেতারা শংকা কাটিয়ে আসছেন এটাই বড় পাওয়া। এভাবে চলতে থাকলে বড় ক্ষতির সম্মুখিন থেকে বাঁচবো।
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদকে ঘিরে ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা ভালো বেচাবিক্রি চলছে। নিউ মার্কেট ও আশেপাশে এলাকারজুড়ে ফুটপাতসহ সবগুলো দোকানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসছেন। ঈদ মৌসুমকে ঘিরে সারা বছরের পরিকল্পনা থাকে ব্যবসায়ীদের। ভালো বেচাবিক্রি হলে সবার ভালো লাগে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর নিউ মার্কেট, আমতল, রিয়াজুদ্দীনবাজার এলাকা ঘিরে হকাররা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে থ্রি পিস, শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের কাপড়, টুপি, আতর, জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক। শুধু নিউমার্কেট নয় নগরীর স্টেশন রোড, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, বহদ্দারহাট, লালদীঘি, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, ষোলশহর ২নং গেইট, অক্সিজেন, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, টেক্সটাইল, বাংলা বাজার, শেরশাহ, আতুরার ডিপো, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত কেন্দ্রিক দোকানগুলোতে জমে উঠেছে ঈদবাজার। এসব দোকানে চলছে জমজমাট বেচাকেনা।
নিউমার্কেটের সামনে কাপড় বিক্রি করা শরীফুল ইসলাম বলেন, শপিংমলে যে কাপড় ১২শ টাকায় পাওয়া যায়, সেটা আমাদের এখানে আমরা ৬-৮শ টাকার মধ্যে বিক্রি করছি। অনেকের ধারণা দাম কম হয় তো কাপড়ের মান ভালো হবে না, আসলে এ ধারণা এখন আর নেই। যার কারণে ফুটপাতেও যে ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায় তা মানুষ বুঝে গেছে। যার কারণে শপিংমলের চেয়ে ফুটপাতে আমাদের দোকানগুলোত ভিড় জমে উঠছে।
নগরীর চকবাজার গুলজার মোড় থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য কাপড় কিনছেন পোশাক শ্রমিক সাজিয়া আকতার। তিনি বলেন, বেতন বোনাস এখনো না হলেও ছেলে বায়না ধরেছে নতুন কাপড় কিনে দিতে হবে। একজনের কাছ থেকে ধার করে ছেলের জন্য কাপড় নিতে আসলাম। বড় বড় মার্কেটে কাপড়ের যে দাম তা আমাদের সাধ্যের বাইরে। ভাসমান এসব দোকানে ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায় এবং দামও সাধ্যের মধ্যে থাকে।
এদিকে ঈদের জামা কাপড়ের পাশাপাশি জমে উঠেছে টুপি ও আতরের দোকান। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় নানা রঙ ও ডিজাইনের টুপি নিয়ে সাজিয়েছে দোকানগুলো। বাজারে দেশীয় টুপির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের আমদানি করা টুপিও রয়েছে চাহিদার শীর্ষে। নগরের বিভিন্ন টুপি ও আতরের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রি হওয়া টুপির মধ্যে আছে বাংলাদেশে তৈরি নেপালি, পকিস্তানি, ইন্দোনেশিয়ান ভিআইপি, পাকিস্তানি কাশ্মীরি হ্যান্ডমেইড ডিজাইন টুপির রেপ্লিকা পাওয়া যাচ্ছে। আমদানিকৃত টুপির মধ্যে আছে পকিস্তানি, মালয়েশিয়ান, গুজরাটি, তাজিকিস্তান, স্টার আফগানী টুপি। এছাড়া আব্বাসী, ফিরোজি ও নুরানী টুপি, পাকিস্তানি হাতের বানানো, পাকিস্তানি নরমাল টুপি, পাকিস্তানি গর্জিয়াস, ইন্ডিয়ান বগিস, ইন্ডিয়ান মুম্বাই টুপি, গুজরাাটি, ইন্দোনেশিয়ান টুপি, তুর্কিস টুপি, রুমি ক্যাপ, অটোম্যান টুপি, হাতে তৈরি কাশ্মীরি ডিজাইন, বগিস বিক্রি হচ্ছে। দেশিয় তৈরি টুপির মধ্যে আছে জালি টুপি, হাতে বোনা জালি টুপি, বাংলা খেজুর পাতা ডিজাইন, বাংলা ভিআইপি টুপি, বাংলা চুমকি উচু টুপি ও ঝিকঝাক টুপি। আছে নানা ডিজাইনের বাচ্চাদের টুপি। কয়েকজন বিক্রেতা জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও হাটহাজারী, কক্সবাজারের চকরিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালে হাতেবোনা টুপির চাহিদা রয়েছে এবার। জালি টুপি নামেই এগুলো পরিচিত।
এছাড়াও আতরের দোকানে দেখা গেছে, নানা ব্র্যান্ডের আতরের পাশাপাশি সুরাতি, আমীর আল উদ, এসআচ আল আরাবিয়া, দালাল, সুলতান, মাস্কাল কাবা, নাফা কাস্তুরী, সুইটস মাসকাল তাহারা, উদ, আবদুস সামাদ কোরাইশী, শাফাঘ উদ, জান্নাতুল ফেরদৌস, আমির আল কুয়াদিরাজা’সহ বিভিন্ন নামের আতর বিক্রি হচ্ছে। সিলেট থেকে আসা অর্গানিক অয়েল বা আতর বিক্রি হচ্ছে। যেটা সিলেটি উদ নামেও পরিচিত